বশেমুরবিপ্রবি
বিষধর সাপের উপদ্রবে আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা, নেই অ্যান্টিভেনম ব্যবস্থা
- বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২১, ০৩:১৫ PM , আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৪৬ PM
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) সাম্প্রতিক সময়ে বিষধর সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এর ফলে আতঙ্কে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং প্রধান ফটকের নিকটবর্তী জায়গাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাঁচটি সাপের দেখা মিলেছে, যার মধ্যে অন্তত দুইটি সাপ বিষাক্ত ছিলো বলে সাপ বিশেষজ্ঞরা ছবি দেখে জানিয়েছেন।
চলার পথে সাপ দেখতে পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রক্তিম ওহাব। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সন্ধ্যার সময়ে আমরা ছেলেদের হল গেট থেকে চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে দোকানে যাচ্ছিলাম পথিমধ্যে হঠাৎই একটি সাপ সামনে চলে আসে। ভয় পেয়ে সাপটিকে তাৎক্ষণিকভাবে মেরে ফেলে কয়েকজন। পরে জানতে পারি সাপটি বিষধর ছিল।
ওহাব বলেন, আমাদের ভাগ্য ভালো ছিলো যে, আমরা সাপটি দেখতে পেয়েছিলাম অন্যথায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।
শিক্ষার্থীদের চলার পথে সাপ ঘোরাফেরা করায় এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহাবান জানিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছি এবং কাজও শুরু হয়েছে।
তবে সাপের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিলেও সাপে কামড়ালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, এমন কি গোপালগঞ্জ জেলার কোনো হাসপাতালেই নেই অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা।
অ্যান্টিভেনম সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই জানিয়ে বশেমুরবিপ্রবির মেডিকেল অফিসার ডা. অভিষেক বিশ্বাস বলেন, অ্যান্টিভেনম সংরক্ষণের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন এবং যে ধরনের এক্সপার্ট পারসন প্রয়োজন সেটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে এই মুহূর্তে নেই।
অন্যদিকে গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত মল্লিক জানান, এই মুহূর্তে সদর হাসপাতাল কিংবা শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংরক্ষণে কোনো অ্যান্টিভেনম নেই। বেশ কয়েক বছর আগে একবার আনা হয়েছিলো, কিন্তু কখনও তা ব্যবহার করা হয়নি।
ডা. মল্লিক বলেন, মূলত সচরাচর অ্যান্টিভেনম প্রয়োজন না হওয়ায় এটি সংরক্ষণে রাখা হচ্ছে না।
সাপের চলাচল, বিষধর-নির্বিষ সাপ না চেনা, সাপের প্রতি ব্যবহার এবং করণীয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও রয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব। এজন্যই তাদের মাঝে বেশি আতঙ্ক কাজ করে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। ভয় থেকে অনেকেই সাপ সামনে পেলে তাকে মেরে ফেলতেই স্বস্তি বোধ করেন।
তবে সাপ মারার পরিবর্তে মানুষের চলার পথ থেকে দূরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্লাইমেট এক্টিভিস্ট মো. নজরুল ইসলাম। বশেমুরবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এমন কাজ করা উচিত নয় যার মাধ্যমে ইকো সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নজরুল বলেন, ক্যাম্পাসে বিষধর সাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে প্রশাসন প্রাকৃতিক পদ্ধতি হিসেবে গুইসাপ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। বিষাক্ত সাপ গুইসাপের অন্যতম প্রধান খাদ্য। তাই গুইসাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিষাক্ত সাপের সংখ্যা হ্রাস পাবে। এছাড়া কোনো বিষধর সাপ চোখে পড়লে সেটি না মেরে উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এজন্য, জরুরী সহায়তা পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বন বিভাগের জরুরি যোগাযোগের নম্বর টানিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন নজরুল।