বশেমুরবিপ্রবি
কৃষকদের উন্নত জাতের ধান চেনাবে ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়া’
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২০ AM , আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১০:৪১ AM
উন্নত জাতের ধানের ফলন সম্পর্কে কৃষক ও গবেষকদের জানাতে ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়া’ কার্যক্রম চালু করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কৃষি বিভাগ।
বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক ড. জিলহাস আহমেদ জুয়েলের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রথমবারের মত পরিচালিত হচ্ছে এই ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়া’ কার্যক্রম। এতে সরেজমিনে অংশ নিচ্ছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরাও।
এ কার্যক্রমের অধীনে গোপালগঞ্জের পরিবেশে মোট ২১টি জাতের ধানের ফলনসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই কার্যক্রম বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। সম্প্রতি ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়ায়’ চাষকৃত ধানের জাতগুলোর ভ্যারাইটি ইভ্যালুয়েশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়া’ কার্যক্রম কী? জানতে চাইলে এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেওয়া ড. জিলহাস আহমেদ জুয়েল বলেন, একটি ক্যাফেটেরিয়ায় যেভাবে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তেমনি আমাদের এই ক্রপ বা শস্য ক্যাফেটেরিয়াতেও বিভিন্ন জাতের শস্য পাওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী একটি স্থানে এই ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়া’ স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে ড. জিলহাস বলেন, আমরা এখন ২১ প্রজাতির ধান নিয়ে আমাদের ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়ায়’ গবেষণা চালাচ্ছি।
ড.জিলহাস আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক নতুন বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলো এখনও আমাদের এই অঞ্চলে খুব একটা প্রচলিত হয়নি। আমাদের একটি লক্ষ্য, এই প্রজাতিগুলো এখানে চাষ করে শিক্ষক-রিসার্চারসহ স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে একটি মূল্যায়ন সংগ্রহ করা। এই মূল্যায়নের উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের নতুন এসকল ধানের জাত চাষ করার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হবে।
“কৃষকরা এই ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়ায়’ এসে তাদের জমির জন্য উপযোগী ধানের জাতটি সহজেই খুঁজে নিতে পারবে। এর দ্বারা উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি লাভবান হবে কৃষকরাও। অন্যদিকে গবেষকরাও, বিশেষ করে আমাদের শিক্ষার্থীরা, এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবে”, বলেন ড. জিলহাস।
এদিকে ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়া’ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে উৎচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরাও। বশেমুরবিপ্রবির কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ ফারুকী সিয়াম বলেন, আমরা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে একদিকে যেমন হাতে কলমে শিখতে পারছি, অপরদিকে এর মাধ্যমে গোপালগঞ্জের কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন।
সিয়াম জানান, ইতোমধ্যে তারা বেশ কয়েকটি জাত শনাক্ত করেছেন যেগুলো গোপালগঞ্জে প্রচলিত ধানের জাতগুলোর তুলনায় ফলনের দিক থেকে এগিয়ে। এই বিষয়গুলো কৃষকদের নিকট তুলে ধরা গেলে তারা ভবিষ্যতে এ সকল ধানের জাত চাষ করে অধিক লাভবান হবেন বলে আশা সিয়ামের।
এই কার্যক্রমের মূল্যায়নের জন্য গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) ‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়ায়’ চাষকৃত ধানের জাতগুলোর ‘ভ্যারাইটি ইভ্যালুয়েশন প্রোগ্রাম’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোপালগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সেকান্দার শেখ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, বশেমুরবিপ্রবি কৃষি বিভাগের সভাপতি এইচএম আনিসুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক ড. গোলাম ফেরদৌস, মো. আরিফুল ইসলাম, প্রভাষক ফারজানা জেরিন আইভিসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা, স্থানীয় কৃষক এবং রাইস মিল সংশ্লিষ্টরা।
‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়ার’ তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষক ড. জিলহাস আহমেদ জুয়েল এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা অতিথিদের কাছে কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ক্রপ ক্যাফেটেরিয়ার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছি এখানে বেশ কয়েকটি জাতের ধানের ফলন বেশ ভালো।
কৃষি বিভাগের এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এটি স্থানীয় কৃষকদের জন্য সৌভাগ্যের যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগ এধরনের একটি কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মাধ্যমে তারা সহজেই বুঝতে পারবে কোন জাতের ধান চাষ করলে তারা অধিক লাভবান হবে। আমি প্রত্যাশা করছি তারা (কৃষি বিভাগ) এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
‘ক্রপ ক্যাফেটেরিয়া’ কার্যক্রম সম্পর্কে কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান এইচ এম আনিসুজ্জামান বলেন, নতুন বিভাগ হওয়ায় আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও বিভাগ থেকে এ ধরনের একটি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করছি আমাদের বিভাগে ভবিষ্যতেও এধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।