শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মচারীকে ভয় দেখিয়ে চুরির দায় স্বীকার করানোর অভিযোগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. হাসিবুর রহমানের বিরুদ্ধে একই বিভাগের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. আবু সাঈদকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিভাগীয় উন্নয়ন ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলনের দায় স্বীকার করানোর অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে গত ৮ নভেম্বর ভুক্তভোগী মো. আবু সাঈদ কর্তৃক এক চিঠিতে নায্য বিচার দাবি করেছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগ উন্নয়ন ফান্ড থেকে বিভাগের সভাপতির নির্দেশে ও তার স্বাক্ষরকৃত চেকের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখা হতে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা উত্তোলন করে ড. হাসিবুর রহমানের নিকট হস্তান্তর করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর হাসিবুর রহমান বিভাগের অফিস রুমে তাকে এককভাবে ডেকে নিয়ে চাকুরি চলে যাওয়ার ভয় দেখান।

চিঠিতে তিনি আরও দাবি করেন, বিভাগীয় চেয়াম্যান ওই সময় তাকে বলেন, তাদের সকলের সুবিধার্থে তিনি যেন টাকাটা দিয়ে দেন এবং পরবর্তীতে তারা বিভাগের সকলে মিলে তার টাকা ফেরত দেবেন। মো: আবু সাইদের ভাষ্য অনুযায়ী ওই সময় হাসিবুর রহমান তাকে বলেন, তিনি যে টাকাটা তাকে দিয়ে তুলিয়েছেন সেই বিষয়টি উল্লেখ করে রেজিস্ট্রার বরাবর একটা চিঠি প্রেরণ করবেন এবং তার চাকুরির কোন দিক যাতে ক্ষতি না হয় সেই বিষয়টিও দেখবেন।

এর প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান এর নির্দেশে, রেজিস্ট্রার বরাবর দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দুই কিস্তিতে জমা দেন এবং তদন্ত কমিটির নিকট হাসিবুর রহমান যে ভাবে বলতে বলেন তিনি সেইভাবে বলেন। এসময় হাসিবুর রহমান তাকে আরও ভয়ভীতি দেখান, এই বিষয়ে জানাজানি হলে ভাইস-চ্যান্সেলরকে বলে তাকে চাকুরি হতে অব্যাহতি করিয়ে দিবেন। আর এসকল কারণে এতদিন তিনি ভয়ে কাউকে কিছু বলেননি।

এতদিন পরে অভিযোগ উত্থাপনের প্রসঙ্গে মো. আবু সাঈদ বলেন, “তিনি আমাকে শুরু থেকেই ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন তাই চাকরির কথা চিন্তা করে চুপ ছিলাম। তাছাড়া এ বিষয়ে এতদিন আমার কাছে কোনো প্রমাণ ছিলো না কিন্তু সম্প্রতি সৌভাগ্যক্রমে আমি বিভাগের একটি কাজ করতে গিয়ে সেই চিঠিটি খুঁজে পাই এবং খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি চিঠিটি রেজিস্ট্রার, প্রক্টর কিংবা ডিন কাউকেই দেননি। তিনি চিঠিটি শুধুমাত্র আমাকে আশ্বস্ত করতে দেখিয়েছিলেন।”

এসময় মো: আবু সাঈদ তার কাছে থাকা ড.হাসিবুর রহমান সাক্ষরিত একটি চিঠি দেখান। গত ৪ নভেম্বর রেজিস্ট্রার বরাবর লেখা উক্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, “যথাযথ সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্নস্বাক্ষারকারী এই মর্মে ঘোষনা করিতেছি যে, গত ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, (বশেমুরবিপ্রবি) শাখার হিসাব নং ০২০০০১১৬৯৩৩৩৯ এবং ৭৯৯৪৩৬৬ নং উন্নয়ন তহবিলের চেকটি আমার নিজ দায়িত্বে থাকায় আমার নির্দেশে, আমার স্বাক্ষরের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক, গোপালগঞ্জ শাখা হইতে টাকা উত্তোলন করিয়াছেন। অত্র বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠু সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় থাকা এবং ঘটনার পরিস্থিতি শান্ত রাখার লক্ষ্যে আমার বিভাগে কর্মরত মো. আবু সাঈদ, (অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর) এর নিকট হতে ‘indemnity’ বাবদ দুই কিস্তিতে টাকা প্রদানের জন্য আপনার নিকট প্রেরণ করা হল।"

অতএব, ভবিষ্যতে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যাহাতে উক্ত মো. আবু সাঈদ কে কোনরুপ হেনস্থা না করে বিষয়টি আপনার অবগতির জন্য সদয় প্রেরণ করা হইল।”

এদিকে, একই বিভাগের অন্য এক কর্মচারী ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রাসেল মিয়া একই ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি চেয়ে গত ৪ নভেম্বর রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। উক্ত চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিভাগের ব্যাংক একাউন্টের চেকে তার নাম ব্যবহার করে কেউ একজন অগ্রনী ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখা থেকে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়।

এ ঘটনার বিষয়ে সে সময়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। এই ঘটনার জন্য বিভাগে তাকে নানা ভাবে হয়রানি ও মানহানিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হচ্ছে যার ফলে তিনি মানসিকভাবে বিব্রত বোধ করছেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে তিনি প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. হাসিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি উক্ত অফিস সহকারীকে কোনোরূপ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেননি এবং উক্ত অফিস সহকারী রেজিস্ট্রার বরাবর দেয়া তার সাক্ষরকৃত যে কাগজটি দেখিয়েছেন সেখানে তার স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে।"

চেক জালিয়াতি প্রসঙ্গে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ড. রাজিউর রহমান বলেন, ‘‘এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো এবং তদন্ত কমিটি তার কাজ শেষ করেছে। এখন যেহেতু এ বিষয়ে নতুন একটি চিঠি সামনে এসেছে তাই বিষয়টি নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হবে।’’

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. একিউএম মাহাবুব বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একাউন্ট থেকে আড়াই লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। পরবর্তীতে বিভাগটির চেয়ারম্যান ড. হাসিবুর রহমান দাবি করেন চেক জালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং উত্তোলনকারী টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে অর্থ উত্তোলনকারী ব্যক্তির নাম গোপন রাখা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ