নিজস্ব এখতিয়ারের অজুহাতে আইন উপেক্ষা করছেন বশেমুরবিপ্রবি ভিসি
- বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১২:১০ AM , আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১২:১০ AM
বাংলাদেশে প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই উল্লেখ থাকে এই আইনে। সাধারণত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় সেই আইন অনুযায়ীই পরিচালিত হয়।
তবে এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়েরর রিজেন্ট বোর্ড এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে বশেমুরবিপ্রবি আইন ২০০১-কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ এর ১৮নং ধারার ‘ঞ’ উপধারায় বলা হয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এর মধ্য হইতে নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হবেন। তবে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ধারাটি উপেক্ষা করে গেছেন বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. এ কিউ এম মাহবুব।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হাসিবুর রহমান কে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা জানিয়েছেন একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় যখন উপাচার্য ড. হাসিবুর রহমানের নাম উত্থাপন করেন তখন শিক্ষকদের একটি বড় অংশ এর বিরোধিতা করেন এবং কেউই সরাসরি তার পক্ষে সম্মতি প্রকাশ করেননি।
এ বিষয়ে বিজনেস অনুষদের ডিন ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় যখন বিষয়টি তোলা হয় তখন সভায় স্বশরীরে উপস্থিত থাকা ডিনদের অধিকাংশ এবং অনলাইনে যুক্ত থাকা চেয়ারম্যানদের বড় একটি অংশ দ্বিমত প্রকাশ করেন। এর প্রেক্ষিতে উপাচার্য স্যার বলেন আমরা এই বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে কথা বলবো। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে আমাদেরকে এ বিষয়ে আর কিছু জানান নি।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস বালা বলেন, অনলাইন সভায় সকলের একসাথে কথা বলার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা যখন কথা বলার সুযোগ পেয়েছি আমিসহ অনেকেই হাসিবুর রহমানকে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করি। এমনকি উপাচার্যও বলেছিলেন এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। এরপরে তাকে কিভাবে কাদের মতামতের ভিত্তিতে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নির্বাচন করা হলো আমার জানা নেই।
এছাড়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, হাসিবুর রহমান ছাড়াও ইতোপূর্বেও যাদের রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নির্বাচন করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও উপাচার্য বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেখানে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা মতামত প্রকাশের সুযোগ পাননি।
তবে, এ বিষয়ে ড. হাসিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন চারজন ব্যতীত একাডেমিক কাউন্সিলের সকলেই তার সদস্য হওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।
এদিকে শুধুমাত্র রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নির্বাচনই নয় আইন উপেক্ষা করার ঘটনা ঘটেছে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। বশেমুরবিপ্রবি আইনের ২১নং ধারার ‘জ’ উপধারায় বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপকবৃন্দ কর্তৃক নির্বাচিত একজন সহযোগী অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হবেন এবং ‘ঝ’ উপধারায় বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকবৃন্দ কর্তৃক নির্বাচিত একজন সহকারী অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হবেন।
তবে এক্ষেত্রে কোনো ধরনের নির্বাচন ছাড়াই সম্প্রতি একাডেমিক কাউন্সিলে সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামসুল আরেফিনকে এবং সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ আবু সালেহকে সদস্যপদ প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সদস্যপদপ্রাপ্ত ড. শামসুল আরেফিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সম্পর্কে আমার সঠিকভাবে জানা নেই। আমাকে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছিলো আমাকে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ড. মো: আবু সালেহ দাবি করেন, উপাচার্য তার নিজস্ব এখতিয়ার ব্যবহার করে তাকে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছেন।
এদিকে এধরণের নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একটি অংশ। বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আব্দুর রহমান বলেন, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আমার অধিকার রয়েছে একাডেমিক কাউন্সিলে সহকারী অধ্যাপকদের প্রতিনিধি হিসেবে কে থাকবেন সে বিষয়ে মতামত প্রকাশ করা। কিন্তু যখন এভাবে কাউকে সদস্যপদ দেয়া হয় তখন আমাদের সেই মতামত প্রদানের অধিকারটা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের প্রধান হচ্ছে উপাচার্য, তার নিজেস্ব একটা এখতিয়ার আছে। তাছাড়া রিজেন্ট বোর্ড সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাডেমিক কাউন্সিলে কিছু লোক বিরোধিতা করেছে ঠিকই কিন্তু বড় অংশতে তাকে সমর্থন করেছে। দুই বছর পর আবার পরিবর্তন করা হবে এটাতে তেমন কোন সমস্য দেখছিনা।