কেমন উপাচার্য চান হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

ওপরে বা থেকে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী প্রসেনজিত বিশ্বাস ও নাহিদ হাসান এবং নিচে মেহেদী হাসান, হাবিবুর রহমান ও মুশফিকুর রহমান
ওপরে বা থেকে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী প্রসেনজিত বিশ্বাস ও নাহিদ হাসান এবং নিচে মেহেদী হাসান, হাবিবুর রহমান ও মুশফিকুর রহমান  © সংগৃহীত

উত্তরবঙ্গের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ ও প্রথম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। তেভাগা ও কৃষক আন্দোলন অন্যতম নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ’র নামানুসারে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে।

পথচলার ২১ বছরে ছয়জন শিক্ষাবিদকে অভিভাবক হিসেবে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। আগামী ১ ফ্রেবুয়ারি উপাচার্যের চার বছর মেয়াদকাল পূর্ণ হতে যাচ্ছে।

তবে করোনার কারণে গত ১০ মাস নিজ গৃহে থাকার পর গত বুধবার স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ভোররাতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তিনি। যাওয়ার সময় একটি চিঠিতে তিনি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদারকে রুটিন দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন। তিনি চলে যাওয়ায় হাবিপ্রবি পরিবারে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কে হচ্ছেন আগামীতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার!

অভিভাবক হিসেবে কেমন উপাচার্য চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? মতামত জানতে বিভিন্ন অনুষদীয় বিভাগের পাঁচ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পস। শিক্ষার্থীদের মতামতে উঠে এসেছে নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা।

বিজ্ঞান অনুষদের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী প্রসেনজিত বিশ্বাস বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই একটা বিষয় মনে হতো, পিএইচডি করা মানে হল অনেক বড় একজন শিক্ষিত মানুষ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে মনে হয়েছে, পিএইচডিই সব না। একজন ভিসি হতে হলে তাকে অবশ্যই প্রচণ্ড সাংগঠনিক মানুষ হতে হবে। আমাদের দেশের নোংরা শিক্ষক রাজনীতি মোকাবিলা করাটা জানতে হবে। নাহলে অনেক বড় লক্ষ্য থাকলেও সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ভিসিকে সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠানগুলোয় সময় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। হাবিপ্রবিতে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হয়, কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা লজ্জাজনক। এই বিল্ডিংভিত্তিক উন্নতির কথা বাদ দিয়ে আসল কাজে মন দেয়ার দরকার। শিক্ষার মানের দিকে নজর দিতে হবে। আমার কাছে এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।’

মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ’র শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, ‘একজন ছাত্রবান্ধব ভিসি চাই, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে কাজ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে কাজ করবেন। যেমন- গবেষণা, পর্যাপ্ত ডিজিটাল সুবিধা- যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের বহির্বিশ্বের সাথে যুগোপযোগী করে তৈরি করতে পারে। এছাড়া ভিসির নিজের স্বকীয়তা থাকবে অর্থাৎ নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে এমন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনে কাজ করবেন।’

ফিশারিজ অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘উপাচার্য হবেন সবার জন্য। কোন ব্যক্তি বিশেষ বা ফ্যাকাল্টি বিশেষ কিংবা এলাকা বিশেষের জন্য নয়। সকলকে সমান পাল্লায় বিচার করবেন, কাছে টেনে নেবেন। ইজমমুক্ত উপাচার্য স্যার একটা ইজমমুক্ত প্রশাসন উপহার দিতে পারবেন, যা আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। সর্বোপরি বলবো, যিনি একটা সেশনজট মুক্ত, গবেষণামুখী, ইজমমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিতে পারবেন, এমন একজন মানুষকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দেখতে চাই।’

উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের এমএস শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান তার মতামত জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমি চাই উপাচার্য হোক আমাদের মতো সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে। সাধারণ ছাত্রের অধিকারের জন্য সহ-অবস্থানে সরব থাকুন। আর ইজম ও তেলবাজীমুক্ত হোক। কতিপয় ছাত্রনেতাকে নিয়ে নিজেকে সোলেমান খান মনে না করুক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো সবদিক ঠিক রেখে উন্নতি ঘটাক শিক্ষার। ইট, কাঠ, পাথরের ভার্সিটির উন্নতি না করিয়ে পড়াশোনার মান উন্নয়ন করুক। ইটের বিল্ডিং করতে গিয়ে গবেষণা প্লট নষ্ট না করে ইমারতের উপরের দিকে বৃদ্ধি ঘটিয়ে টবে/ছাদে গবেষণা বন্ধ করবেন।’

এদিকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে হাবিপ্রবির যিনি ভিসি হবেন তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী, সৎ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় হল রাষ্ট্রের মতো। একটি রাষ্ট্র চালাতে যে যে গুণাবলী দরকার, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারেরও সেই সেই গুনাবলী থাকা দরকার বলে আমি মনে করছি।’

তিনি বলেন, ‘তাকে প্রথমত দুরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে। একজন ভিসি ছাত্র-শিক্ষকবান্ধব হবেন যাতে করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়। সেশনজট কমাতে তিনি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, তিনি গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করবেন, যাতে করে তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান, শিক্ষক সংকট র্নিমূলে, ল্যাব সমস্যার সমাধান, আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসনও তার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আশা করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘২০১৬ সালে ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর থেকে দেখতে পাচ্ছি, নানা ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামে ভার্সিটি জর্জারিত, যাতে করে শিক্ষাথীরা নানা ধরনের সেশনজটে আটকে আছেন। আশা করবো, সামনের দিকে যিনি ভিসি হবেন, তিনি সকল গ্রুপিং, ইজম, স্বজনপ্রীতি মুক্ত হয়ে সেজনজট কমাতে, ভার্সিটিকে সামনে এগিয়ে নিতে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।’


সর্বশেষ সংবাদ