বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষায় ছিলো লাল পাহাড়ের রাবিপ্রবি

 রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

আঁকা-বাঁকা সড়কটা পাহাড়ের মাঝে দিয়ে চলে যায় দূর থেকে দূরান্তে। শরতের মেঘের ভেলা ভাসিয়ে, বর্ষায় বৃষ্টিকে নাচিয়ে, শীতকালে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত করে অনন্য এক রূপে ফেরে রাঙ্গামাটি। সুবিশাল লাল পাহাড়ের মাঝে হঠাৎ করে চোখে পরে যায় সদ্য দাঁড়ানো কিছু রঙ্গিন দালানঘর। বলছিলাম রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।

সবুজের সমারোহের মাঝে জ্ঞানের মশালে আলোকিত করেছে তার আপন ভূবনকে। যার মশাল থেকে আগুন নিয়ে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী নিজেদের করে যাচ্ছে আলোকিত। জ্ঞানের সাক্ষী ”শিক্ষা, সম্প্রীতি, প্রগতির” এক অনন্য প্রতীক রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিজ ক্যাম্পাসে পার করলো তার এক বছর। কেমন ছিলো শেষ বছরের চাওয়া পাওয়া ও অর্জনের পরিসংখ্যান? সে উত্তরের অপেক্ষায় পুরো বছরের হিসেব নিকেশ দেখা যাক!

জানুয়ারি: বছরের প্রথম মাসে নবীন শিক্ষার্থীদের সাক্ষাতকারের মাধ্যমে আপন গতিতে চলতে শুরু করে রাবিপ্রবি। এই মাসে রাবিপ্রবি পায় বাঁধনের নতুন কমিটি ও ইউনিট।
ফেব্রুয়ারি: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন,বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসবে মাধ্যমে নতুন ক্যাম্পাসে দারুণ এক আমেজ তৈরি করে শিক্ষার্থীরা।
মার্চ: ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চ, মুজিব কর্ণার উদ্বোধন, মুজিববর্ষ ও শিশুদিবস পালন করে রাবিপ্রবি। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে করোনা পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ অজানা দিনের ছুটিতে শিক্ষার্থীরা প্রাণের ক্যাম্পাসকে বিদায় জানায় এই মাসে।
এপ্রিল: বৈসাবির উৎসবে এবার রাবিপ্রবির আনন্দ হয়নি। বরং করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে হাল ধরতে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান সহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এক দিনের সমপরিমাণ বেতনের অর্থ প্রেরণ করে রাবিপ্রবি।
জুলাই: করোনা পরিস্থিতির কারণে রাবিপ্রবির জন্মদিনে ছিলোনা কোন বিশেষ আয়োজন। এই মাসে হাউজ টিউটরের রদবদল করেছে রাবিপ্রবি প্রশাসন। নতুন করে শিক্ষার্থীদের হল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা ছিলো নবাগত হাউজ টিউটরদের। করোনা পরিস্থিতির কারণে পুরো বিষয় থমকে যায়। অপর দিকে ঝুলে থাকা নবীনদের ভবিষ্যতকে এগিয়ে নিতে ৬ষ্ঠ ব্যাচের অনলাইন ওরিয়েন্টেশন ক্লাস করে রাবিপ্রবি। দীর্ঘদিন পরীক্ষা, ক্লাস বন্ধ থাকার কারণে সেশনজট এড়াতে অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত হয় এই মাসে। বেশ কয়েকদিন ঈদের ছুটিতেও ছিলো প্রশাসন।
আগস্ট: শোকের মাসে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। অপেক্ষার অনলাইন ক্লাস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর “জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ)” উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো এই মাসেই।

অক্টোবর: দুর্গাপূজার ছুটির পাশাপাশি ক্যান্টিন উদ্বোধন ও কাপ্তাইলেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয় এই মাসে। তবে পুরো মাস জুড়ে ওয়েব সাইট হ্যাকের বিষয় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলো। অবশ্য প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে খুব তাড়াতাড়ি ওয়েব সাইটটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো।
নভেম্বর: করোনা পরিস্থিতির কারণে সিএসই ও ম্যানেজমেন্ট দিবস পালন করেনি রাবিপ্রবি প্রশাসন। তবে প্রাণপ্রিয় ডিপার্টমেন্টের একটি জন্মদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পালন করে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ। এই মাসেই বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের মাঝে অন্যতম একজন সৈয়দ আসাদুজ্জামানের (সহকারী অধ্যাপক, সিএসই বিভাগ) কে পেয়ে রাবিপ্রবি হয়েছে যেমন গৌরবান্বিত তেমনি আনন্দিত। রাবিপ্রবির প্রথম ক্লাব হিসেবে এই মাসেই অনলাইনেই ১ম বর্ষপূর্তি পালন করে স্টারস্ অব সাকসেস ক্লাব। সিএসই বিভাগের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ধীমান শর্মা (সহকারী অধ্যাপক) ।
ডিসেম্বর: বছরের শেষ মাসে রাবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল এর ফলক উন্মোচিত হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো,বিজয় দিবস পালন সহ বছরের শেষ সময়ে বড় দিনের ছুটি ও শীত কালের অবকাশে রাবিপ্রবি এখন নিশ্চুপ।

বিদায়ী বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা শিক্ষার্থীদের তেমন কোন কাজে আসেনি। আসছে নতুন বছর। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন কি কি পরিবর্তন আনবে রাবিপ্রবি তা কেবল সময়ের অপেক্ষায়। প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর প্রাণপ্রিয় এই ক্যাম্পাস থাকুক নিরাপদ। এগিয়ে যাক সগৌরবে সামনের দিকে এমন প্রত্যাশা রাবিপ্রবিয়ানদের।


সর্বশেষ সংবাদ