ভিসিকে আল্টিমেটাম, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে যাচ্ছে নোবিপ্রবি শিক্ষকরা

লোগো
লোগো

দীর্ঘদিন ধরে চলমান নিয়োগকেন্দ্রিক জটিলতার সুরাহা না হওয়ায় এবার আন্দোলনে যাচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপাচার্যকে সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের অচলাবস্থার সমাধান করতে না পারলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কথা জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

শিক্ষকরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নিষেধাজ্ঞায় প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। এমতাবস্থায় দু-চারজন শিক্ষক দিয়েও চালিয়ে নিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশকিছু বিভাগের অ্যকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। সংকট থাকায় শিক্ষাছুটিতেও যেতে পারছেন না শিক্ষকরা। আবার মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞায় আটকে আছে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ৬০ শিক্ষকের পদায়ন। 

গত ৩১ আগস্ট নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি থেকে উপাচার্যকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ জন শিক্ষক শিক্ষাছুটির বিপরীতে অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের স্থায়ীকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক শিক্ষকের পরবর্তী পদে পদোন্নতির সময়ও প্রায় এক বছর পার হয়েছে। তাদের পর স্থায়ী পদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও পদোন্নতি পেয়ে গেছেন। ফলে শিক্ষকদের মাঝে এক ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। মাত্র দুজন শিক্ষক দিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ফলে শিক্ষার মান খারাপ হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা অবহেলিত হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় ও বিভাগ পরিচালনায় পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় অনেক বিভাগের শিক্ষকরা শিক্ষাছুটিতে যেতে পারছেন না। তাই ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিষয়টি সুরাহা না করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ বড় ধরনের কর্মসূচিতে যেতে আমরা বাধ্য হব।

শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ; উল্টো অনেক শিক্ষক শিক্ষাছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেছেন। ফলে শিক্ষক সংকট ক্রমেই বাড়ছে। অন্যদিকে নতুন বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। স্থগিতাদেশের কারণে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া প্রায় ৬০ জন শিক্ষকের স্থায়ী নিয়োগ না হওয়ায় তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।  আমরা এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই। অন্যথায় আমাদের অবস্থান কী হবে- সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে নোবিপ্রবির তৎকালীন উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম করে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ঘটনার তদন্তে ওই বছরের জুলাইয়ে ইউজিসি  সদস্য অধ্যাপক ড. এম শাহ নওয়াজকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটি প্রাথমিক কিছু কাজ করার পরপরই চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউজিসির সদস্যপদ থেকে অবসরে চলে যান ড. শাহ নওয়াজ। এরপর নতুন করে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেটি হয়নি। এমনকি ওই কমিটির সদস্যরাও এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দিতে পারছেন না। অথচ ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অজুহাত দেখিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না মন্ত্রণালয়।


সর্বশেষ সংবাদ