বশেমুরবিপ্রবিতে খোলা আকাশের নিচে ২ কোটি টাকার আসবাবপত্র
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া, বশেমুরবিপ্রবি
- প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ১০:১০ AM , আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০, ০৯:৪২ AM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) খোলা আকাশের নিচে অযত্নে পড়ে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার আসবাবপত্র। টাকার হিসেবে এসবের মূল্যে ২ কোটিরও বেশি। প্রয়োজনের অনেক বেশি সংখ্যক আসবাবপত্র ক্রয় করায় এখন সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় স্টোরের জায়গা সংকট থাকায় এসব আসবাবগুলো সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের সময়ে ‘বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অধীনে সরকারি টাকায় এসব আসবাবপত্র ক্রয় করা হয়েছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং একাডেমিক ভবনের সামনের ও পেছনের অংশে খোলা আকাশের নিচে প্রায় ৮০০টি স্টিল নির্মিত বেড, প্রায় ২০০টি কাঠের তৈরি টেবিল, প্রায় ১০০টি চেয়ার এবং প্রায় ২০০টি বেঞ্চ পড়ে রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজে রয়েছে প্রায় ৩০০টি বেঞ্চ। রোদ, ধুলো ঝড়, বৃষ্টি আর কুয়াশার ফলে এসকল মালামালের অধিকাংশই ইতোমধ্যে নষ্ট হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বৃষ্টি আর ধুলবালির প্রভাবে স্টিল নির্মিত অধিকাংশ বেডগুলোতেই মরিচা পড়তে শুরু করেছে আর কাঠের তৈরি মালামালগুলোর বার্নিশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বশেমুরবিপ্রবির পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি স্টিলের বেডের মূল্য প্রায় ১৬ হাজার ৭৫০ টাকা, বেঞ্চের মূল্য ১১ হাজার ১০০ টাকা, রিডিং টেবিলের মূল্য ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং রিডিং চেয়ারের মূল্য ৩ হাজার ৩৫০ টাকা। সেই হিসেবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার বেড, ৫৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার বেঞ্চ, ১৫ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকার টেবিল, ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকার চেয়ার; সর্বমোট প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার আসবাব নষ্ট হচ্ছে।
পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত খুলনা শিপইয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড থেকে ১০টি ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে মোট ১১ কোটি ৭০ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৩০ টাকার ফার্নিচার ক্রয় করা হয়। এসব ফার্নিচারের মধ্যে স্টিল নির্মিত বেড ছিলো ২৪৪৫টি, কাঠের নির্মিত বেঞ্চ ছিলো ২৪৬০টি, রিডিং টেবিল ছিলো ২৬৫০ এবং রিডিং চেয়ার ছিলো ২৫৮০টি। কিন্তু এই সময়ে নতুনভাবে ৪০০ আসনবিশিষ্ট মাত্র দুটি হল নির্মাণ করা হয়। আর নবনির্মিত একাডেমিক ভবনে ৩৫-৪০টি ক্লাসরুম তৈরি করা হয়, যেগুলোতে বেঞ্চের চাহিদা ছিলো সর্বোচ্চ ১৫০০টি।
এছাড়া রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ এর জানুয়ারি থেকে ২০১৯ এর জুলাই পর্যন্ত পূর্বনির্মিত হলগুলোর মধ্যে শুধু স্বাধীনতা দিবস হল থেকে ২০টি বেড, ৪০টি চেয়ার, ৪০টি টেবিল এবং ৩০টি বেঞ্চের চাহিদা জানানো হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নতুন নির্মিত হল ও ক্লাসরুমগুলোর জন্য ১০০০-১৫০০টি করে বেড, রিডিং চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু প্রয়োজনের অনেক বেশি সংখ্যক পণ্য অর্ডার করায় এগুলো এখন নষ্ট হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, অর্ডারকৃত সকল পণ্য এখনো আসেনি সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে আরও অধিক পণ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না, সাবেক উপাচার্যের নির্দেশে আমি ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করি এবং পরবর্তীতে যখন অগ্রীম অর্থ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন আমি পদত্যাগ করি।’
মালামাল সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা বশেমুরবিপ্রবির স্টোর কিপার মো. সাইফুল্লাহ রাজু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রশাসনকে স্টোরের জায়গা বৃদ্ধির জন্য গত দু’বছরে প্রায় পাঁচবার চিঠি প্রদান করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। স্টোরের জায়গা বৃদ্ধি পেলেই এসব মালামালের সঠিক সংরক্ষণ সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের স্টোরের জায়গার সংকট রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি আসবাবগুলো যতটা সম্ভব সংরক্ষণ করতে।’