অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, বাড়িওয়ালাদের নিকট জিম্মি শিক্ষার্থীরা
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:৩৯ PM , আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০, ১০:২৮ PM
ভাড়া করা বিভিন্ন মেসে থাকতে গিয়ে বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অশালীন আচরণ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানান স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন তারা। এমনটাই অভিযোগ গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের। তবে বাড়ির মালিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সংসার ব্যয় বহন করতেই ভাড়া বেশি রাখতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১২,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকলেও পাঁচটি হলে মাত্র ১,৫০০ সিট রয়েছে। ফলে প্রায় ১০,০০০ শিক্ষার্থী তাদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে বিভিন্ন মেসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করছেন পার্শ্ববর্তী স্থানীয় বাড়িওয়ালারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দেশের অন্যান্য যেকোনো এলাকার তুলনায় গোপালগঞ্জে বাড়িভাড়া অনেক বেশি এবং বাড়িভাড়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও বাড়িওয়ালারা তা মেনে চলেন না। নীতিমালা অনুযায়ী দুই বছর পর বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও গোপালগঞ্জে প্রতিবছরই বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
স্থানীয় বেশ কয়েকটি এলাকার বাড়িভাড়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনজন থাকতে পারে এমন একটি রুমের নূন্যতম ভাড়া প্রায় ৪,৫০০। যেখানে দুজন থাকতে পারে এমন রুমের নূন্যতম ভাড়া প্রায় ৩,৫০০ এবং একজন থাকার উপযোগী একটি রুমের ভাড়া প্রায় ৩,০০০।
উচ্চমূল্যের এ বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান জানান, ‘আমাকে একটি সিটের ভাড়া হিসেবে প্রতিমাসে ২,০০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই উচ্চভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে দিনের একটি বড় অংশ টিউশনিতে ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে নিজের একাডেমিক পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে।’
শুধুমাত্র উচ্চভাড়াই নয়, বেশিরভাগ বাড়ি নির্মাণাধীন অবস্থায় প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করেই ভাড়া প্রদান করা হয়। এছাড়া বাড়িভাড়া নেওয়ার সময় এক বছরের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। ফলে ওই বাসায় শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে কিংবা প্রয়োজন হলেও চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসা ত্যাগ করতে পারেন না।
অভিযোগের ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবীনবাগ এলাকার একজন বাড়িওয়ালা বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার বাড়িভাড়ার টাকায় চলে। দ্রব্যমূল্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া বাড়াতে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বাড়িভাড়া নিয়ে বছরের মাঝামাঝি সময়ে ছেড়ে দেয়। তখন ভাড়াটিয়া পাওয়া যায় না। তাই আমরা চুক্তি করি।’
মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, ‘পড়ালেখায় সঠিকভাবে মনোনিবেশ করার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যারা বিভিন্ন মেসে থাকে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সাথে উচ্চ বাসা ভাড়া পূরণের জন্য তাদের আর্থিকভাবেও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং হতাশাগ্রস্ত করে তোলে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক কাজী মসিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। রাতারাতি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। নতুন হল নির্মাণের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যাও কমাতে হবে। আমরা পরিকল্পনা করছি পরবর্তী বছর থেকে প্রথমবর্ষে প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৪০ এ কমিয়ে আনবো। এছাড়া বর্তমানে উচ্চ বাড়ি ভাড়া সমস্যার সমাধান হিসেবে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবিধাজনক বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের চেষ্টা করবো।’