দাবি আদায় না হলে ক্লাসে ফিরবেন না বুয়েট শিক্ষার্থীরা

রাজপথে বুয়েট শিক্ষার্থীরা
রাজপথে বুয়েট শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

১৬ দফা দাবি আদায়ে আজও রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

আজ বুধবার (১৯ জুন) পঞ্চম দিনের মতো বুয়েট শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এদিন আন্দোলনকারীরা দলবদ্ধ হয়ে রেজিস্ট্রার ভবনে তালা লাগিয়ে দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েট ভিসির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে গত দুইদিন আগে ভিসি ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর থেকে ভিসি স্যার আর ক্যাম্পাসে আসেননি।

এদিকে এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে শিক্ষকদের মাধ্যমে সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন বুয়েট ভিসি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানতে রাজি নয়, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় পঞ্চম দিনের আন্দোলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১টায় বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সমাবেত হন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ভিসি ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।

তারা ‘প্রশাসনের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’; ‘প্রহসনের প্রশাসন মানি না, মানি না’; ‘স্বৈরাচারী প্রশাসন মানি না, মানবো না’; ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে না’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে’; ‘হৈ-হৈ, রৈ-রৈ ভিসি স্যার গেল কই’- স্লোগান দিতে থাকেন। তারা ভিসি ভবনের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে পলাশী সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে ১৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দাবি আদায়ে তারা টানা পাঁচদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

বুয়েট আন্দোলনের মুখপাত্র মেকানিক্যাল বিভাগ শেষবর্ষের ছাত্র হাসান সরোয়ার সৈকত বলেন, দাবি আদায় ছাড়া আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। আমরা গত পাঁচদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেয়া হয়নি। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়েই বুধবার প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনকে বুয়েট শিক্ষক সমিতি সমর্থন জানিয়েছেন। যৌক্তিক আন্দোলন বলেই তারা এতে সংহতি প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন সময়েও আমরা এসব দাবিতে আন্দোলন করেছি, আমাদের শুধু আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে এবার দৃশ্যমান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- বুয়েট গেটের জন্য সিভিল-আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে ও ডিজাইনের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আয়োজন করার অফিসিয়াল নোটিশ দিতে হবে, বিতর্কিত নতুন ডিএসডাব্লিউকে (ছাত্রকল্যাণ পরিচালক) অপসারণ করে ছাত্র বান্ধব ডিএসডাব্লিউ নিয়োগ দিতে হবে, ছাত্রী হলের নাম ‘সাবেকুন নাহার সনি হল’ হিসেবে নামকরণ করতে হবে, ১০৮ ক্রেডিট অর্জনের পর ডাবল সাপ্লি দেওয়ার যে পদ্ধতি গত টার্মে চালু হয়েছিল সেটা পুনর্বহাল রাখতে হবে, আবাসিক হলগুলোর অবকাঠামোগত যেসব কাজ উপাচার্যের অফিসে আটকে আছে সেটা ক্লিয়ার করতে হবে, সিয়াম-সাইফ সুইমিংপুল কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য উপাচার্যের সিগনেচারে নোটিশ দিতে হবে, নির্মাণাধীন টিএসসি ভবন ও নেম ভবনের কাজ শুরু করতে হবে, নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়ন প্রোগ্রাম চালু করতে হবে, বুয়েটের যাবতীয় লেনদেনের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার অফিশিয়াল উদ্যোগ নিতে হবে, নির্বিচারে ক্যাম্পাসের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে, কেন গাছ কাটা হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা দিতে হবে, যতগুলো গাছ কাটা হয়েছে তার দ্বিগুণ গাছ উপাচার্যকে উপস্থিত থেকে লাগাতে হবে, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক মেইল আইডি দিতে হবে, বুয়েট ওয়াইফাই আধুনিকায়ন করতে হবে, ব্যায়ামাগার আধুনিকায়ন করতে হবে, বুয়েট মাঠের উন্নয়ন করতে হবে এবং পরীক্ষার খাতায় রোলের পরিবর্তে কোড সিস্টেম চালু করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ