টিউশন মিডিয়ার আড়ালে ব্ল্যাকমেল, ক্ষতিগ্রস্ত শাবিপ্রবির নবীন শিক্ষার্থীরা
- মোফাজ্জল হক, শাবিপ্রবি
- প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৫ PM , আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:০৩ PM

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা টিউশন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা নতুন এসে টিউশনি খুঁজতে গিয়ে প্রতারকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। এতে ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ায় ব্ল্যাকমেলের শিকার হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফেসবুকে প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে টিউশন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র।
কিছুদিন আগে টিউশন নিতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের খপ্পরে পড়েছেন আমিরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী। মিডিয়া থেকে টিউশন নিতে গেলে তারা তাকে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সিলেটের বালুচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ও মোবাইল ফোন নম্বর নিচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি কোডও পাঠাচ্ছে। অনেকেই না বুঝে কোড দিয়ে দিলে তাদের বিকাশ কিংবা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়। এরপর প্রতারকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে থাকে। তাদের পরিচিতজনদের কাছেও টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেল করে।
এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘টিউশনি দেওয়ার কথা বলে আমাকে ধরে চা বাগানে নিয়ে যাওয়ার পর টাকা দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে বাসায় ফোন দিয়ে আমি ৪ হাজার টাকা বিকাশে নিয়ে আসি এবং আমার কাছে প্রায় ছয় হাজার টাকা ছিল। আমি সেগুলো তাদের দিই।’
এরপর ১০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১১ হাজার টাকা নেয় তারা আমার কাছে থেকে। মোবাইল ফোনের গ্লাস ভাঙা ছিল বলে ফেরত দেয়। পাসওয়ার্ড নিয়ে টিউশন মিডিয়ার সঙ্গে হওয়া চ্যাট ও কল ডিলিট করে দেয়।’
অনুসন্ধানে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবীন শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এ চক্র ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে লোভনীয় টিউশনির পোস্ট দেয়। তারা লেখে, ‘টিউশনি পেতে কোনো টাকা লাগবে না, একেবারে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করুন।’
এরপর তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ও মোবাইল ফোন নম্বর নিচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি কোডও পাঠাচ্ছে। অনেকেই না বুঝে কোড দিয়ে দিলে তাদের বিকাশ কিংবা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়। এরপর প্রতারকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে থাকে। তাদের পরিচিতজনদের কাছেও টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেল করে।
বিকাশে সেন্ডমানি অথবা মোবাইল রিচার্জের অনুরোধ জানিয়ে বাসায় পড়াতে আসলে টাকা দিয়ে দেবে বলেও অনুরোধ জানায় প্রতারক চক্র। টাকা পাওয়ার সাথে সাথেই ব্লক করে দেওয়া কিংবা মেয়ে শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: বাকৃবি উদ্ভাবিত মিষ্টি আলুর নতুন জাত আশা দেখাচ্ছে পুষ্টি-উৎপাদনে
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী অন্তত ১০জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। এর মধ্যে সাত জনই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পড়ালেখার পাশাপাশি একটা টিউশনি থাকলে তাদের জন্য অনেক উপকার হয়। কিন্তু প্রতারকদের কারণে সেটিও হচ্ছে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মমিনুর রশিদ শুভ বলেন, সিলেটের মির্জাজাঙ্গালের একটি মিডিয়া থেকে ২ হাজার টাকা মিডিয়া ফি’র বিনিময়ে একটা টিউশিন নিয়েছিলাম। পড়ানোর দু’দিন পর মিডিয়ার এ লোক কল করে নিষেধ করে দেয় এই বলে যে, অভিভাবক নাকি আর পড়াবে না। এই বলেই কল কেটে দেয়। পরে অভিভাবকের নম্বরে যোগাযোগ করতে চাইলে তা বন্ধ পাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকি। টিউশন প্রতারণার কয়েকটি ঘটনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসব ঘটনা ক্যাম্পাসের বাইরে হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানান তিনি।