বশেফমুবিপ্রবি
ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে জুনিয়রকে হুমকি সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের
- বশেফমুবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ PM , আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ PM
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ফিশারিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। বিভাগের প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধের জেরে কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী এই হুমকি দিয়েছেন বলে জানা যায়।
অভিযোগকারী মো. ইয়াসির আহমেদ, ফিশারিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এতে ৫৩ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর রয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ৩০ অক্টোবর বিভাগ প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভা শিক্ষকরা অমীমাংসিত রেখে শেষ করেন। পরে বাড়ি ফেরার পথে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা আমাকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং গায়ে হাত তোলার হুমকি দেয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা সরে যেতে বাধ্য হয়।’
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নাম ভুক্তভোগী তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, রাশেদ মামুন, রোকনুজ্জামান জিম, আরিফুর রহমান, মো. হাফিজ উদ্দিন, মো. ফাহিম ও মাহমুদুল আলম সোহান এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। অভিযুক্তরা হলেন একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিযুক্তদের অনেকেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ও তার দোসর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা কারও জন্য হুমকি হবে না বলে মুচলেকাও দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবি নবনিযুক্ত উপাচার্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাল ছাত্রদল
অভিযুক্তদের মধ্যে বশেফমুবিপ্রবির হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রাশেদ মামুন, প্রচার সম্পাদক মো. হাফিজ উদ্দিন ও মাহমুদুল আলম সোহান সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী মো. ইয়াসির আহমেদ বলেন, ‘গত ৩০ অক্টোবর আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয় মিটিং ছিল। সেখানে শিক্ষকরাসহ আমরা আমাদের সিনিয়র ও জুনিয়র মিলে মোট তিন ব্যাচ বসেছিলাম। আমাদের সিনিয়ররা চায় সিলেকশন কিন্তু বাকি অধিকাংশ (২ ব্যাচ) শিক্ষার্থী চায় ইলেকশনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হোক। কিন্তু সিনিয়র ভাইয়েরা রাজি হয় না। পরে আলোচনা চলার পর অমীমাংসিত অবস্থায় মিটিং শেষ করে দেয় শিক্ষককেরা।’
তিনি আরও বলেন, “এরপর আমি ফেরার পথে পথে রাশেদ ভাই আমাকে ডেকে নেন এবং বলে যে ছাত্রলীগ করতাম তার প্রমাণ দেখা। আমরা ছত্রলীগ করি নাই। তার পরপরই আমাকেসহ আমার মাকে নিয়ে গালি দেওয়া শুরু করেন। এরপর আমি বলি ভাই এমন কথা বলতে পারেন না। এর পর বলে ‘তোকে এখন পেটাবো, মেরে ফেলব তুই কি করতে পারবি?’ তখন আমি বলি মারেন ভাই মারেন, মারেন। এমন পরিস্থিতি দেখে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে তখন আর গায়ে হাত তুলতে পারেনি।”
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয়ভাবে নবীনবরণ আয়োজনে অনীহা বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসনের
ইয়াসির আহমেদ বলেন, ‘তাঁরা (অভিযুক্তরা) কয়েকজন ঘিরে ধরে আমার সাথে এমনটি করে। রাশেদ ভাই সরাসরি হুমকি দিয়েছে। জিম ভাই ইচ্ছেমতো গালাগালি করেছে। সাথে আরিফ ভাই, সোহান ভাই গালি ও থ্রেট দিয়েছে আর ফাহিম ভাই আমাকে ধমকাধমকি করেছে। আমাদের মেয়ে জুনিয়াররা যখন বাসে ছিল, তখন তাদের বলাবলি করতে শুনেছে যে এরপর থেকে আর হুমকি দিব না, সরাসরি গায়ে হাত দেব।’
যে সময় ঘটনাটি ঘটে সে সময়ে রেকর্ড করা ২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি অডিওতে উত্তেজিতভাবে কথা বলতে শোনা যায় সবাইকে। সেখানে অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা যায় ‘মারলে তুই কি করবি’।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাশেদ মামুন বলেন, ‘আমাদের স্যারেরাসহ আমরা ও জুনিয়াররা মিলে বসা হয়েছিল। আমাদের সবার নামে নাকি ছাত্রলীগ করার অভিযোগ আছে এমন কথা বলে জুনিয়ররা। এর পর মিটিং শেষে ইয়াসিরকে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছিল তোদের কাছে নাকি ডকুমেন্ট আছে দেখা এখন। এ ছাড়া দেখে নেওয়া বা মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান জিম বলেন, ‘আমাদের সবাইকে গণহারে ছাত্রলীগের দোসর বা ছাত্রলীগ বলেছিল ওরা। ওদের কাছে নাকি ডকুমেন্ট আছে। আমি কখনো ছাত্রলীগ করি নাই। এই ডকুমেন্ট দেখার জন্যই ডাকা হয়েছিল। ওরা আমাদেরই ছোট ভাই এসব (হুমকি) কথা কি আমাদের বলা সম্ভব?’
আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবির ভিসি, প্রো-ভিসির পদত্যাগ
অভিযুক্ত মো. হাফিজ উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যে অভিযোগ দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
এ ছাড়া এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অন্যদের মোবাইলে কল দেওয়া হলে ধরেনি তারা।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. সাদিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। রবিবারে এটার একটা আউটপুট পাওয়া যাবে। যারা ছাত্রলীগে যুক্ত ছিল এবং মুচলেকা লেখা দিয়েছিল তাদের মধ্যে যদি কেউ থাকে এবং প্রমাণিত হয় তাহলে কঠোর একশনে যেতেই হবে।’