ওয়েবসাইট থেকে উধাও প্রজ্ঞাপন, বশেমুরবিপ্রবি ভিসির নিয়োগ নিয়ে ধোঁয়াশা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখকে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) নতুন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৪ বছরের জন্য তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল ৩টার পর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যদিও ঘণ্টাখানেক পর ওয়েবসাইটে সেটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখকে বশেমুরবিপ্রবির ভিসি হিসেবে যোগদান করতে নিষেধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে তার নিয়োগ স্থগিত/বাতিল হতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠে। যদিও ড. হোসেন উদ্দিন শেখ আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ৯টায় ভিসি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। তবে এই গুঞ্জনের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাতিল হচ্ছে বশেমুরবিপ্রবি ভিসি নিয়োগ?
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০ আগস্ট গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব ও প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুল আলম পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে প্রায় আড়াই পর গতকাল মঙ্গলবার নতুন ভিসি ও প্রো-ভিসি নিয়োগ দিয়ে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবির নতুন ভিসি ঢাবি অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন শেখর
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখকে বশেমুরবিপ্রবির ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নিজেই জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করেছিলেন। শুধু তাই নয়, এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে শিক্ষা উপদেষ্টা নিজেই জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গবেষণাকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে দুয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিতদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ বশেমুরবিপ্রবির ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে এমনটাই হলো। তবে বশেমুরবিপ্রবি ভিসি নিয়োগ বাতিল কিংবা বহাল নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা স্পষ্ট করে কোনো কিছু বলতে পারেননি।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমি নিজেই সিভি দেখে তাকে সেখানে নিয়োগ দিয়েছিলাম। পরে শুনেছি নিয়োগে কোনো গন্ডগোল হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সচিব কিংবা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে এসময় তিনি পরামর্শ দেন।
তিনি আরও বলেন, আমি এ পর্যন্ত ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দিয়েছে। তাদের প্রত্যেকের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যালোচনা করে সেটি করা হয়েছে। তবে দুয়েকটিতে নিয়োগে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবিতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের যোগদান
জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, প্রজ্ঞাপনটি ওয়েবসাইট দেওয়ার পর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কেন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেটির সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তিনি বলেন, আজ (বুধবার) পুরো আমি দিন ঢাকার বাইরে ছিলাম। এজন্য বিষয়টি নিয়ে সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) মন্ত্রণালয়ে গেলে বলতে পারব বলে তিনি এসময় জানান।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখ বলেন, প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পর আমি আজ যোগদান করেছি। কিন্তু এরকম কিছু নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তবে আমি শুনেছি ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনটি নেই।
বঙ্গবন্ধু হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল ভিসির বাবা তাহেরউদ্দিন ঠাকুর
তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ছিলেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার অভিযোগে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি মামলা থেকে খালাস পেয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ২০শে অক্টোবর, মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত (ট্রায়াল কোর্ট) ঠাকুরকে জেল হত্যা মামলার অপর অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়।
অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখের বাবা তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। তিনি সন্দেহ করছেন, তার বাবার বিষয়টি নিয়ে কোনো একটা কিছু হতে পারে। তবে তিনি বলেন, মামলা থেকে খালাস পেয়েছিলেন। তার ভাষ্য, আপনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তো হবে না। সেটা যদি প্রমাণ না হয় তাহলে তো আমি আর অপরাধী না— বিষয়টি এমনই।
নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর থেকে আমার পুরো পরিবার কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়নি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আমার একাডেমিক যোগ্যতা বিচার করা হবে। এখানে তো অন্যকিছু নিয়ে প্রশ্নই আসে না। এজন্য বাবার ঘটনার সঙ্গে ভিসি নিয়োগ বাতিল হওয়ার বিষয়টি তিনি নাকচ করেছেন।
তার সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ড. হোসেন উদ্দিন শেখ বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত নন সেটা নিশ্চিত। তবে বিএনপিপন্থীও নন। কেননা সাদা দলের কোনো প্রোগ্রামে তিনি আসতেন না। তাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াত সংশ্লিষ্টতা তার নেই।