ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর প্রকাশ্যে ছাত্রদলের কর্মসূচি, মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের ব্যানারে আবরার ফাহাদের পঞ্চম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মৌন মিছিল ও স্মরণ সভার কিছু ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। ক্যাম্পাসটিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও রাজনৈতিক ব্যানারে এমন কর্মসূচি পালন করায় বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
কেউ বলছেন, প্রশাসন কর্তৃক রাজনীতি নিষিদ্ধ পরও এমন কর্মসূচি কাম্য নয়। ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন তারা। যদিও কারো কারো বক্তব্য, অনুষ্ঠানকারীদের চেয়ে অনুষ্ঠানের বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেটি ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক আবরার ফাহাদকে স্মরণ করে। এতে ক্ষতির কিছু দেখছেন না তারা।
তথ্যমতে, গত রবিবার (১৩ অক্টোবর) সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইকরাম হোসেনের আইডি থেকে পাঁচ দিন আগে দেওয়া ছাত্রদলের ওই অনুষ্ঠানের পোস্টটি প্রাইভেট থেকে পাবলিক করার পর বিষয়টি সবার সামনে আসে। পোস্টে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাবিপ্রবি, জামালপুর’ লেখা ব্যানারসহ পাঁচটি ছবি সংযুক্ত রয়েছে। ছবিগুলোর মধ্যে একটি একাডেমিক ভবন মাঠে ও একটি জামতলা চত্বরে ছাত্রদলের ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বাকি তিনটি ছবি অ্যাকাডেমিক ভবন কনফারেন্স রুমে তোলা।
ফেসবুকে শেয়ার করা ওই পোস্টে ইকরাম ছাড়াও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ ও মারুফ, ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মিয়াদ এবং সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখারুল ইফতি ও সাখাওয়াত হোসেন জিকুকে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত, রাবি শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
এদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের এমন অনুষ্ঠান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আপত্তিও জানাচ্ছেন। মুস্তাফিজুর রহমান এক শিক্ষার্থী বলছেন, ‘বলা হয়েছিলো ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে অনুষ্ঠান চলবে না। তাহলে এটা কি কারণে হলো? রাজনৈতিক আদর্শ কি শুধু আপনাদের আছে? তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এর আগে গত ৯ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে জরুরি এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এক আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইকরাম হোসেনে বলেন, ‘আবরার ফাহাদকে স্মরণ এবং তার কথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্যই মূলত প্রোগ্রামটি ছিল। অন্যান্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এখানেও ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত নয়। এখানে কোন কমিটি নেই, আর আমরা পদপ্রাপ্ত নেতাও নই। সবাই জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। সেই জায়গা থেকে একসাথে বসে আলাপ করেছি মাত্র।’
আরও পড়ুন: ৭৭ আসন ফাঁকা রেখেই ববিতে ক্লাস শুরু ২১ অক্টোবর
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টা জেনেছি। কোন একটি বিশেষ দল যদি এরকম একটি প্রোগ্রাম করে, সেটা দেখে অন্যান্য দলও করতে পারে। তাতে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। যারা এটি করেছে তাদের বিষয়ে আলোচনা করে দেখি কী করা যায়।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীতিনির্ধারকেরা মিলে এক আদেশে সকল রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। এরপর রাজনৈতিক প্রোগ্রাম হয়েছি কি-না জানা নেই। কনফারেন্স রুমে হওয়া ছাত্র সংগঠনের একটি প্রোগ্রামের কিছু ছবি আজ নজরে আসে। কনফারেন্স রমে কোন প্রোগ্রাম করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। তাদের এই প্রোগ্রামের বিষয়ে কেউ অবিহিত করা বা অনুমতি নেয়নি। যেহেতু বিষয়টি নজরে এসেছে সেহেতু আমারা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’