০৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১৫

সংলাপের নামে গুলি চালানোর প্রহসন বন্ধ করুন: শাবিপ্রবিতে সমাবেশে শিক্ষকরা 

শাবিপ্রবিতে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাজের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন  © টিডিসি ফটো

আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, গণহত্যার বিচার, গোলাবারুদের অবসান ও সোনার বাংলায় শান্তি চেয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাজ। এসময় শিক্ষকরা সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন—সংলাপের কথা বলে গুলি চালানোর প্রহসন বন্ধ করুন।

শনিবার (৩ আগস্ট) সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে শাবিপ্রবি শিক্ষক ছাড়াও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন ।

এসময় শিক্ষকরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের চলমান অহিংস আন্দোলনে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা, গণ-গ্রেফতার ও হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

আরও পড়ুন: আনুষ্ঠানিকভাবে এক দফা দাবি ঘোষণা

শিক্ষকরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি যৌক্তিক দাবি হলেও সরকারের একগুয়েমির কারণে বাংলার রাজ পথ আজ রক্তে রঞ্জিত। আমাদের ছেলেমেয়েরা আজ ভালো নেই। অধিকার চাইতে এসে তারা আজ লাশ হয়ে ঘরে ফিরছে। লাশ আর গোলাবারুদের গন্ধে বাংলার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কিন্তু সরকারি বাহিনীর নিষ্ঠুরতা একটুও কমেনি।

সরকার প্রধান একদিকে সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছে অন্যদিকে গুলি, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের বুক ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। এটা জাতির সাথে প্রহসন, এই প্রহসন বন্ধ করুন। আমরা বলতে চাই, আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়। সকল প্রহসন বন্ধ করে ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। আমরা আর রক্ত দেখতে চাই না, আমরা সোনার বাংলায় শান্তি চাই—সমাবেশে জানানো হয়েছে শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে।

এর আগে শনিবার বিকেলে জাতীয় শহীদ মিনার থেকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল থেকে এক দফা ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগ।

আরও পড়ুন: গণজোয়ারে উত্তাল শহীদ মিনার, তিল ধারণের ঠাঁই নেই

এরপর এক দফা নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার যে গণ বিস্ফোরণে মানুষ এক দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। 

যতদিন পর্যন্ত আমাদের এই এক দফা বাস্তবায়ন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা যেসব জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পালন করবেন। বিজয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে—যুক্ত করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশে এখন পর্যন্ত ২১৬ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী এবং শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি—এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আছে ও থাকবে: সেনাপ্রধান

পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ও সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ এবং তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি আন্দোলনকারীদের।

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকরা। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।