‘আমার সোনার চাক্কা আর নাই’ বলে আহাজারি নিহত চুয়েট শিক্ষার্থীর মায়ের

স্বজনদের আহাজারি
স্বজনদের আহাজারি  © সংগৃহীত

বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী শান্ত সাহার (২২) লাশ নরসিংদীতে এসে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়ার সেবাসংঘ এলাকায় বাড়িতে তাঁর লাশ পৌঁছায়। এ সময় তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঈদ-পয়লা বৈশাখের ছুটি কাটিয়ে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন শান্ত। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শান্তর সহপাঠীরা তাঁর বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক সাহার মুঠোফোনে মৃত্যুর খবর জানান। তিন ভাইয়ের মধ্যে শান্ত ছোট। তাঁর মেজ ভাই ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

সকালে বাড়িতে লাশ পৌঁছার পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন শান্তর মা শিউলি সাহা। বুকে-কপালে চাপরাচ্ছেন, আর কান্না করছেন। আহাজারি করে বলছেন, ‘আমার সোনার চাক্কা আর নাই, আমিও আর বাঁচতে চাই না। পোলা ইঞ্জিনিয়ার হইয়া বিদেশে যাইব। আমারে কইছিল, “মাগো, তোমারে বিদেশে নিয়া গিয়া চিকিৎসা করামু।” আমার ইঞ্জিনিয়ার পুতে গেল কই? আমারে কে বিদেশ নিয়া যাইব? আমার পোলারে আইন্যা দেও তোমরা।’ শান্তর লাশ দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও কাঁদতে শুরু করেন। এ সময় তাঁরা শিউলি সাহাকে সান্ত্বনা দেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শান্তর লাশ আনতে তাঁরা চট্টগ্রামে যেতে চেয়েছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয়, ময়নাতদন্ত শেষে ফ্রিজিং গাড়িতে করে তাঁর লাশ নরসিংদীতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কোনো অভিযোগ নেই, মামলাও করতে চান না জানিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে সোমবার রাত ১০টার দিকে লাশবাহী গাড়ি নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হয়। আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে লাশ নরসিংদী শহরের এসে পৌঁছায়। লাশ নিয়ে এসেছেন শান্তর হলের দুই সহকারী প্রভোস্ট মাসুম রানা ও সামিউন বশির এবং সাতজন সহপাঠী।  

চুয়েটে পড়ুয়া শান্তর স্কুলজীবনের বন্ধু সৈকত শাহরিয়ার জানান, ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হলের চারতলার একটি কক্ষে থাকতেন শান্ত। সম্প্রতি ছুটিতে বাড়িতে এসে মোটরসাইকেলটি চালানো শিখছিলেন তিনি। ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পরদিন (গতকাল) বিভাগে দুটি ক্লাস হয়। দুপুরে তাঁর হলের এক বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেলটি চেয়ে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল বিভাগের দুই ছোট ভাই। ফেরার পথে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় একটি বাস।

নরসিংদী জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি ও শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার অনিল ঘোষ বলেন, ‘শান্ত সাহার মতো এমন মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর মা-বাবাকে শান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছি না। এভাবে কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার জিয়ানগর এলাকায় মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এতে মোটরসাইকেলের চালক শান্ত সাহা নিহত হন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মোটরসাইকেরের আরোহী তৌফিক হোসাইন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

সর্বশেষ সংবাদ