বুয়েটের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা, বন্ধ থাকছে ক্লাসও

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পূর্ব নির্ধারিত ও চলমান সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে না ফেরার ঘোষণায় বন্ধ থাকছে শ্রেণি পাঠদানও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় শনিবার অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এসব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে কবে সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সে জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসব, আলোচনা করব, এরপর নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো এবং হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা এটা সমাধান করব। আর হাইকোর্টের লিখিত আদেশ না পাওয়ায় আমরা এখনো সেদিকে চিন্তাভাবনা করিনি। লিখিত আদেশ পেলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম এক সংগঠক জানান, তাদের আন্দোলনের পদ্ধতি কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। প্রশাসন সম্মত হয়েছে যে শিক্ষার্থীরাও আপিল করার জন্য আইনজীবী প্রস্তাব করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিনিধিদল কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ আইনি প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নিতে পারবেন।

একটি দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখা পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না বলে জানান ওই সংগঠক। তিনি জানান, ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের অংশ হিসেবে শনিবার ২০ ব্যাচের কেউ টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ২২ এপ্রিল ১৮ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায়ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন না।

এদিকে, রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ১৩ দিনের ছুটি শেষে বুধবার বুয়েট ক্যাম্পাস খোলে। সেদিন দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হলেও ‘ছাত্র রাজনীতিমুক্ত’ ক্যাম্পাসের দাবিতে পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা।

সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, কিন্তু তারা তা বর্জন করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা৷ পরীক্ষা থাকায় এ দুদিন কোনো ব্যাচের ক্লাস ছিল না। গতকাল শনিবারও ২০তম ব্যাচের একটি পরীক্ষা ছিল, আন্দোলনের অংশ হিসেবে সেটিও তারা বর্জন করেছেন। শিক্ষার্থীরা কোনো পরীক্ষায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশ না নেওয়ায় বুয়েট প্রশাসন আজ এই সিদ্ধান্ত নিলো। 

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।

এরপর গত ২৮ মার্চ গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ডিএসডব্লিউর পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। তবে নিজেদের শিক্ষালয়ে কোনো ধরনের ছাত্ররাজনীতি চান না বলে বরাবরই নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ