আপিল চান হাইকোর্টের রুলের বিরুদ্ধে
ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে বুয়েট শিক্ষক সমিতিও
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১২ PM , আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৩ PM
ক্যাম্পাসে ফের ছাত্ররাজনীতি চালু হোক, তা চান না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষক সমিতিও। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা যে প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন তার বিরুদ্ধেও বুয়েট প্রশাসনকে আপিল করতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এ ব্যাপারে সমিতি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম মঞ্জুর মোরশেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি এসব তথ্য জানানো হয়। বুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বক্তব্য ওই বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৮ মার্চ থেকে উদ্ভূত ঘটনাবলিতে [রাত্রি দ্বিপ্রহরে একটি ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বুয়েট ক্যাম্পাসে অনাহূত আগমন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ দাবি, সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বুয়েট ছাত্রের বহিষ্কার দাবি, উপাচার্য মহোদয় সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে যথাযথ আচরণ না করা, টার্ম-ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন, ১ এপ্রিল হাইকোর্ট কর্তৃক বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধে জারিকৃত আদেশ স্থগিতকরণ, শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলন এবং একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা] বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (প্রবিশিস) উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সেইসাথে কিছু পর্যবেক্ষণ সন্নিবেশ করছে- প্রথমত, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রেজিস্ট্রারের। সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানানো যাচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের ইমেইল প্রেরণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণের আহবান জানাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সাংগাঠনিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে দেওয়া জরুরী বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করার যে রায় গত ১ এপ্রিল হাইকোর্টে দিয়েছে তার বিপরীতে আপিল করার বিষয়টিতে প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হবেন এবং এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তৃতীয়ত, ২০১৯ পরবর্তী বছরগুলোতে বুয়েটে শিক্ষা-কার্যক্রম অবাধে চলেছে এবং সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ বজায় ছিল। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপদ রাখা, বিদ্যাচর্চা অক্ষুণ্ণ রাখা ইত্যাদি আমাদের সকলের দায়িত্ব। শিক্ষক সমিতি এমন পরিবেশই প্রত্যাশা করে। এমতাবস্থায় বর্তমান অচলাবস্থা নিরসন এবং স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছে শিক্ষক সমিতি।
বিবৃতিতে বলা হয়, একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং নিষ্কলুষ ক্যাম্পাস আমাদের সকলের কাম্য। সকল অংশীজনের সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে অচিরেই সে অবস্থা ফিরে আসবে বলে শিক্ষক সমিতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
২৮ মার্চ দিবাগত রাত একটার দিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এর প্রতিবাদে পরদিন ২৯ মার্চ আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এসময় ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
এদিকে, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র বৈধতা নিয়ে ১ এপ্রিল বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম একটি রিট আবেদন করেন। ইমতিয়াজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ 'জরুরি বিজ্ঞপ্তি' স্থগিত করার আদেশ দেন। এর ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিচর্চায় শিক্ষার্থীদের আর কোনো বাধা নেই।
একইসঙ্গে, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।