বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত: ছাত্রলীগ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি এবং শিক্ষা বিরোধী সিদ্ধান্ত জানিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিও জানিয়েছে দেশের অন্যতম এ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বাঙলা কলেজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম (বাপ্পি), সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এ সময় নেতাকর্মীদের ‘মৌলবাদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘শিবিরের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জায়ামাত-শিবির-রাজাকার, তাড়াতাড়ি বাংলা ছাড়’, ‘শিবিরে আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এর আগে গতকাল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, বুয়েট কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির আবাসিক হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকামী মানুষ ও ছাত্রসমাজ চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
আরও পড়ুন: নিয়মিত এক শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই অংশ নেননি বুয়েটের পরীক্ষায়
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ বুয়েট প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে একটি অন্যায্য, অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ও সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক নৈতিক স্খলনজনিত শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও এই রাষ্ট্রে সাধারণের শিক্ষার অধিকার একটি গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছে এ দেশের ছাত্রসমাজ। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সাম্প্রতিককালে সংবিধান সম্মত ছাত্র রাজনীতি নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এমন কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে, যা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের মহান সংবিধানের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বুয়েট বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থে পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই সর্বাবস্থায় এই রাষ্ট্রের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের দ্বারা এটি পরিচালিত হতে হবে। কিন্তু তা না করে, এই আইনের কোথাও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা বুয়েটকে প্রদান করা না হলেও বুয়েট প্রশাসন বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে তা বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
ছাত্রলীগ বলছে, মূলধারার প্রকাশ্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুয়েটকে দেশ ও বিশ্ব মানবতাবিরোধী, নিষিদ্ধ, অন্ধকার জগতের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার তীর্থস্থানে পরিণত করা হয়েছে।
এর আগে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল ৭টায় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এদিন তারা দাবি বাস্তবায়নে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
রবিবার সকালে বুয়েটের আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত থাকলে দাবি আদায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সেটাও তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের সার্বিক অবস্থান জানান দিতে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। এদিন দুপুরের পরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত, চলছে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরার ফাহাদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। তবে গত বছর বুয়েট শিক্ষার্থীদের পদ দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা তৈরি হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পুরোনো বিজ্ঞপ্তিটি আবার ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়।
গত বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায়।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে গতকাল বিকেলে শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি বুয়েট প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বুধবার মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে “বহিরাগতদের” প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন।
আরও পড়ুন: বুয়েটে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর গোপনে কার্যক্রম গভীরভাবে তদন্ত করা হবে: শিক্ষামন্ত্রী
ইমতিয়াজকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, হলের সিট বাতিলসহ তার সহযোগীদেরও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারেরও দাবি শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দিচ্ছে তার ব্যাখ্যাও চেয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। এসব দাবি আদায়ে শনি ও রবিবারের (৩০ ও ৩১ মার্চ) পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এদিন নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলে মোট ২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।