নির্বাচন ‘দেখতে’ ঢাকায় পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা!
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির (এএসবি) নির্বাচন উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাতে অবস্থান করছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক কর্মকর্তা। রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ উচ্চপদস্থ কেউ না থাকাতে না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে ঢিলেমি দেখা গেছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির (এএসবি) দুই বছর মেয়াদি নতুন কাউন্সিল গঠনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি)। ঢাকাস্থ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রাঙ্গণে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবার দুটি প্যানেল অংশগ্রহণ করছে ‘মূলধারা প্যানেল’ এবং ‘মুক্তবুদ্ধিচর্চার প্যানেল’।
আরও পড়ুন: ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কাউন্সিল নির্বাচন
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ‘মূলধারা প্যানেল’ থেকে এশিয়াটিক সোসাইটির এবারের নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ সকালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রাঙ্গণে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও উপাচার্যের নির্বাচন করতে রেজিস্ট্রারসহ ঢাকাতে একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দেখে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাচার্যের নির্বাচন উপলক্ষ্যে গতকাল সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কে এম সালাহউদ্দিন। উপ-উপাচার্য দুইদিন থেকে ছুটিতে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন গত রবিবার (২৮ জানুয়ারি) উপাচার্যের নির্বাচনী কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। গত রবিবার প্রশাসনিক ভবনে এক কর্মকর্তাকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হত্যার হুমকি দিলেও সেটি সমাধান না করে প্রক্টর ঢাকায় চলে যান।
নির্বাচন উপলক্ষ্যে আজ সকালে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাঙ্গণে রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্ম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামরুল হাসান, অর্থ ও হিসাব শাখার উপ-পরিচালক শামসাদ ফখরুল, জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী, নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, উপাচার্যের পিএস মনিরুজ্জামানকে দেখা গেছে। এ নিয়ে জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরীকে ফেসবুকে ছবি দিতে দেখা গেছে।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ নির্বাচনে ভোট চাওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকায় গত সপ্তাহ ধরে বেশিরভাগ সময় উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িসহ অন্যন্য সুবিধা ব্যবহার করে তিনি দলবলসহ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকায় সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তাছাড়া অভিভাবকহীন ক্যাম্পাসে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
গত রবিবার শরীরচর্চা দপ্তরের কর্মকর্তা শেখ শাহজামাল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে তার দপ্তরে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলেও এ নিয়ে এখন কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকায় ফরম পূরণ, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, সার্টিফিকেট উত্তোলন সকল কাজে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
অর্থ ও হিসাব দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন বর্তমান মাসের বেতন পর্যন্ত যথাসময়ে না পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র শরিফুল ইসলাম বলেন, দূর থেকে এসে গত এক সপ্তাহ ঘুরেও সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারছি না উপাচার্যের স্বাক্ষর না হওয়ার কারণে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি ঢাকায় আসছি ডায়েরির কাজে। আমার ছেলে ঢাকায় থাকে তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এছাড়া একেকজন একেক কাজে ঢাকায় আসছে। সব কাজ ঠিকমতই চলছে।
বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্ম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নির্বাচন উপলক্ষ্যে নয়, ব্যক্তিগত কাজে ছুটি নিয়ে এবং দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় এসেছি। ঢাকায় আমার যে কাজ ছিল সেগুলো করছি। তখন তিনি প্রশ্ন রাখেন, ব্যক্তিগত কাজে কেউ কি ঢাকায় আসতে পারবেন না?