হাবিপ্রবির টিএসসিতে পৃথক শৌচাগারের দাবি ছাত্রীদের

হাবিপ্রবির টিএসসি
হাবিপ্রবির টিএসসি  © সংগৃহীত

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা শৌচাগার নেই। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে একই শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। এতে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় নারী শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে ছাত্রীদের পিরিয়ডকালীন সময়ে বিষয়টি নিয়ে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছেলে-মেয়েদের পৃথক শোচাগারের বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানানো হলেও তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে মাত্র একটি শৌচাগার রয়েছে। এতে টয়লেটের সংখ্যাও অপ্রতুল। মাত্র তিনটি টয়লেট রয়েছে। আবার এতে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নেই আলাদা টয়লেট। ফলে প্রতিনিয়ত ব্রিবতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে।

এছাড়া শৌচাগারের ভেতরে টয়লেটগুলোতে লাইট থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে। ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। শৌচাগারে সাবান ও টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। এমনকি টিস্যু ফেলার পর্যাপ্ত ঝুড়িও রাখা হয়নি। মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করা হলেও সর্বশেষ কবে পরিষ্কার হয়েছে তা জানেনা কেউ। প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ আসে শৌচাগার থেকে। শুধু ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ঘুরেও এমন চিত্র দেখা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ভবনগুলোতে দেখা যায় বেসিনে ট্যাপ আছে কিন্তু পানি আসে না, আবার কোনোটিতে ট্যাপই নেই। কোনটির পানির ট্যাপ ভেঙে অনবরত পানি পড়ে শৌচাগারের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। বেশিরভাগ বেসিনের উপর থেকে আয়না উধাও হয়ে গেছে, আবার কোনোটিতে পুরোটা থাকলেও তার উপর রং পড়ে চেহারা দেখা যায় না। 

এছাড়া প্রায় অধিকাংশ শৌচাগারের ফ্ল্যাশ অচল। কোনটির ফ্লাশে ধুলো-বালির আবরণ পড়ে আছে। অনেকগুলো শৌচাগারে বদনা পাওয়া যায় নি, তাছাড়া অনেক শৌচাগারের দরজায় ছিটকিনি নেই। অনেক শৌচাগারের লাইট নেই, থাকলেও সেগুলো জ্বলে না। যেসব শিক্ষকের কক্ষে সংযুক্ত ওয়াশরুম নেই, তাদেরকেও বিষয়টি নিয়ে বিরম্বনায় পড়তে হয়। নারী শিক্ষকেরাও এমন ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। 

No photo description available.

হাবিপ্রবির টিএসসির টয়লেটের বেহাল দশা

বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির শৌচাগার নারীবান্ধব নয় এমন অভিযোগ তুলে ছাত্রীরা বলেন, টিএসসিতে নারীবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় পিরিয়ড চলাকালে অনেকে টয়লেটে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। বাধ্য হয়ে দীর্ঘক্ষণ পরে থাকতে হয় একই স্যানিটারি প্যাড। এতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাদের। অথবা দূরে অন্য ভবনে যেতে হয় তাদেরকে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে টিএসসি প্রাঙ্গণে। এছাড়া কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশাপাশি টিএসসিতেও পড়াশোনা করতে আসেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্লাসের বাইরে দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের টিএসসিতে অবস্থান করতে দেখা যায়।  

টিএসসিতে পড়তে আসা পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী রেশমা বলেন, শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ আসার কারণে ওইদিকে কেউ বসতে চায় না। প্রায় খালি থাকে শৌচাগারের পাশের টেবিলগুলো। 

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা তাসনিম বলেন, আমাদের টিএসসিতে একটাই মাত্র কমন ওয়াশরুম। কিন্তু একজন মেয়ের পক্ষে সবসময় কমন ওয়াশরুম ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এটা অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। দেখা যায় ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে অন্য কোথাও যাওয়ার অবস্থা না থাকার কারণে আমাদেরকে বেছে নিতে হয় টিএসসির এই ওয়াশরুম। কিন্তু এখানে মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে কোন প্রাইভেসি বা ওয়াশরুম না থাকার কারণে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহাবুব হোসেন দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা শৌচাগার আলাদা করার ব্যাপারে ভেবেছি। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ