অর্ধকোটি টাকা চাঁদা চেয়ে বুটেক্সের ক্যান্টিন ভাঙচুর ছাত্রলীগের

বুটেক্সের ক্যান্টিন
বুটেক্সের ক্যান্টিন  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ক্যান্টিনে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ক্যান্টিনের কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ পরিচয়ে এসে তাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা ক্যান্টিনে ভাঙচুর শুরু করেন।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাখা ছাত্রলীগ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা নিজেরাও ক্যান্টিনের উন্নয়নে কাজ করছেন। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। ব্যক্তি আক্রোশ থেকে কেউ এমন অভিযোগ করতে পারে বলে দাবি সংগঠনটির শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিপুর।

ক্যান্টিনে ভাঙচুরের বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় আমরা ক্যান্টিন পরিচালক ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে একটা সভা আহ্বান করেছি। -ড. রিয়াজ আহমেদ, পরিচালক, ছাত্রকল্যাণ

গত ১৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বুটেক্স ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের চাঁদা দাবি ও ভাঙচুরের মতো ঘটনায় বিরক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকে ক্যান্টিনের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আর এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্যান্টিনের পরিচালক পরশ।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫-৪৬ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ পরিচয়ে ক্যান্টিনে আসেন। তারা ক্যান্টিনের স্টাফদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। স্টাফরা চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা স্টাফদের দিকে তেড়ে এসে ক্যান্টিনের জিনিসপত্র ভাঙচুর শুরু করেন।

পরশ অভিযোগ করে বলেন, বুটেক্স ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জাতীয় নির্বাচনের আগের আগেও একবার ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। সে টাকা না পেয়ে এখন ৫০ লাখ টাকা দাবি করছেন।

এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে ক্যান্টিন বন্ধ রাখায় বেশ বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। যারা হলের বাইরের শিক্ষার্থী তারা ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ক্যাম্পাসের এ ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় তাদের বাইরের থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবি জানানো হয়েছে।

৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান বলেন, সকালে ক্লাস থাকলে নাস্তা না করেই ক্যাম্পাসে আসতে হয়। পরে ক্লাসের বিরতিতে ক্যান্টিন থেকে নাস্তা সেরে নিই। কিন্তু এখন ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় আমাদের নাস্তা করতে বিটাক মোড়ে যেতে হচ্ছে। যেটা অনেক সময় সাপেক্ষ এবং এর জন্য ক্লাসে যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারছি না।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণের পরিচালক ড. রিয়াজ আহমেদ বলেন, ক্যান্টিনে ভাঙচুরের বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় আমরা ক্যান্টিন পরিচালক ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে একটা সভা আহ্বান করেছি। বিষয়টি আলোচনা করেই সমাধান করা হবে। সভা শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

ক্যান্টিনে কোনো ধরনের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। আর চাঁদা দাবি করার বিষয়টিও মন গড়া অভিযোগ। একটা ক্যান্টিন থেকে কেউ ৫০ লাখ টাকা চায়! এগুলো হচ্ছে গ্রাম্য মানুষের কাজ। -টিপু, সভাপতি, শাখা ছাত্রলীগ

তবে বুটেক্সের ক্যান্টিনে কোনো ধরনের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিপু। তিনি বলেন, চাঁদা দাবি করার বিষয়টিও মন গড়া অভিযোগ। টিপু বলেন, একটা ক্যান্টিন থেকে কেউ ৫০ লাখ টাকা চায়! এগুলো হচ্ছে গ্রাম্য মানুষের কাজ। সেখানে যেমন একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন, অভিযোগ করেন। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে হয়তো কেউ এ ধরনের অভিযোগ করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ক্যান্টিনে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা চলছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে এসে অভিযোগ দিয়েছেন। পরে আমরা কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্যান্টিনের দায়িত্বশীলদের একাধিকবার এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেখানে আমরা ক্যান্টিনের উন্নয়নে কাজ করছি, সেখানে আমাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।


সর্বশেষ সংবাদ