উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে: ইউজিসি চেয়ারম্যান

চুয়েটে ২১তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর
চুয়েটে ২১তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রতি মনযোগ বাড়াতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কলাবোরেশন শক্তিশালী করতে হবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ হবে।’

তিনি রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রকৌশণল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে ২১তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। প্রধান বক্তা ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম.এ. মালেক।

ইউজিসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমাদের দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো আমাদের রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু সেই সীমিত রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে একজন শিক্ষার্থী তার চিন্তাভাবনাকে লালন করে সেটাকে পূর্ণতা এনে দিতে পারে।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমাল পাল, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন। স্বাগত বক্তব্য দেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় প্রধানগণের পক্ষে এমআইই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন আহাম্মদ, হল প্রভোস্টগণের পক্ষে সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোছা. ফারজানা রহমান জুথী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাম্মদ ইকরাম, স্টাফ এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব মো. জামাল উদ্দীন এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান, ফাইরুজ তাসনীম রুহিয়া ও আশরাফুল আলম তানিম।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ, ইটিই বিভাগের প্রভাষক প্রিয়ন্তি পাল টুম্পা ও এমআইই বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়া বিনতে হাই। অনুষ্ঠানের শুরুতে চুয়েটের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘চুয়েট মাত্র দুই দশকের পথচলায় দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা সংস্কৃতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশ-বিদেশে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়েও আমাদের অবস্থান সুসংহত হয়েছে। সবার সহায়তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। আজকের এইদিনে আমি সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

প্রধান বক্তার বক্তব্যে এম.এ. মালেক বলেন, ‘গণমাধ্যমের নীতি হচ্ছে শুধুই কাজ করে যাওয়া। স্বীকৃতির আশায় আমরা বসে থাকি না। দৈনিক আজাদী ঐতিহাসিকভাবে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আমার বাবা মরহুম আবদুল খালেক ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মুসলমান ইঞ্জিনিয়ার।

তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই বিআইটি থেকে চুয়েট রূপান্তরের আন্দোলন-সংগ্রামে আজাদী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। চুয়েট মেধাবীদের উর্বর ভূমি। চুয়েটের যেকোনো অর্জনে তাই আমরাও আনন্দিত হই। চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও পরিকল্পনায় আমরা চুয়েটের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রত্যাশা করি। দৈনিক আজাদী সামনের দিনগুলোতেও চুয়েটের সকল প্রয়োজনে পাশে থাকবে।

আলোচনা সভা শেষে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে রক্তদান কর্মসূচি এবং পরে শিক্ষক বনাম ছাত্র ও কর্মকর্তা বনাম কর্মচারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে থেকে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন অতিথিরা।

এর পরপরই ২১তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে এক আনন্দ র‌্যালি রেব করা হয়। র‌্যালিতে রঙ-বেরঙের বাঁশি-ভুভুজেলা ও ঢাকঢোল বাজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। পরে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম সংলগ্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৩ এর স্মারক বৃক্ষরোপণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই স্বায়ত্ত্বশাসিত ‘বিআইটি, চট্টগ্রাম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চুয়েটে বর্তমানে ১২টি বিভাগে ৯২০টি আসনের (কোটাসহ মোট ৯৩১ আসন) বিপরীতে স্নাতক পর্যায়ে ৪ হাজার ৮০০ জন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১২০০ জন-সহ সবমিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। এছাড়া ১০১ জন পিএইচডি ডিগ্রীধারীসহ প্রায় ৩৪০ জন শিক্ষক, ১৭০ জন কর্মকর্তা এবং ৪৬০ জন কর্মচারী নিয়ে একটি পরিবার হিসেবে চুয়েট এগিয়ে যাচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ