নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, সেই শিক্ষকের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ

যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত নোবিপ্রবি শিক্ষক মুশফিকুর আশিক
যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত নোবিপ্রবি শিক্ষক মুশফিকুর আশিক   © ফাইল ছবি

অনিবার্য পরিস্থিতি উল্লেখ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে পদাবনতিসহ বিভিন্ন শাস্তি পাওয়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক এস এম মুশফিকুর রহমান আশিক। 

মঙ্গলবার (২৯ তারিখ) নোবিপ্রবি শিক্ষা অনুষদের ডিন ও শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মুশফিক আশিক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে আমার নিকট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। আমি নিয়মানুযায়ী পত্রটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেছে।  

ড. বিপ্লব মল্লিক আরও বলেন, পদত্যাগপত্রের চিঠিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তার সঙ্গে সম্পর্কিত হিসেব নিকেশ জানতে চেয়েছে। এসব হিসেব সম্পন্ন করে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে এবং রিজেন্ট বোর্ডে এটি উত্থাপন করে অফিসিয়ালি তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সম্পর্ক শেষ হবে।

পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নোবিপ্রবি রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। তিনি বলেন, আমরা তার চিঠি গ্রহণ করেছি এবং পদত্যাগ কার্যকর হয়ে গেছে। এখন এই সংক্রান্ত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

আরও পড়ুনঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন যেন এক গোলক ধাঁধা

এরআগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আব্দুল বাকী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে জানানো হয়,  অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৫ বছরের জন্য মুশফিকুর রহমান আশিককে নিম্নপদে অর্থাৎ প্রভাষক পদে পদাবনতি করা হয়েছে। এ সময়ে তিনি প্রমোশনের কোনো আবেদন করতে পারবেন না এবং শিক্ষাছুটিতে যেতে পারবেন না। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে।   

ওই আদেশে আরও বলা হয়, যে সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ওই ব্যাচসমূহের সকল অ্যাকাডেমিক ও সকল প্রশাসনিক কাজে তিনি অংশ নিতে পারবেন না। বিভাগের নতুন ব্যাচে তিনি ক্লাস ও পরীক্ষার কাজে অংশ নিতে পারবেন। তবে তার ক্লাস কার্যক্রম বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিবিড় পর্যবেক্ষণ করবেন।

এর আগে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ১৮ শিক্ষার্থী। এতে মোট ১৬টি বিষয় উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। যার মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ভয়ভীতি (পরীক্ষার ফলাফলের) প্রদর্শনের মাধ্যমে তার নিজস্ব অফিস কক্ষে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করা, অনলাইন পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডে ছাত্রীদের অশালীন প্রশ্ন করা, নিজের পছন্দের শিক্ষার্থীকে দিয়ে একই ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল রেজাল্ট শিটে লিপিবদ্ধ করা, শ্রেণিকক্ষে থাকার থেকে শিক্ষকদের রুমে থাকলে সিজিপিএ ভালো করা যায়—এ ধরনের বিভিন্ন কথা বলা, মার্কস বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে অশালীন ও অনৈতিক ইঙ্গিত প্রদান করা।

এছাড়াও পরীক্ষা চলাকালীন পছন্দের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে ও শ্রেণিকক্ষে সরাসরি হুমকি প্রদান করা এবং অপমান, অপদস্ত, লাঞ্ছিত করা, ক্লাস টেস্ট ও ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর প্রদান করা, পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করে তখনই ফলাফল প্রদান এবং ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের তিনি বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন বলে অভিযোগ বিভাগের শিক্ষার্থীদের।

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে এস এম মুশফিকুর রহমান আশিককে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন তোলেননি।


সর্বশেষ সংবাদ