আধিপত্য বিস্তারে পবিপ্রবিতে বারবার সংঘর্ষ, নেপথ্যে বিচারহীনতা

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। গত ২ দশকের বেশি সময়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষা অঙ্গনে বেশ সুনামও কুড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে এরপরও প্রায়ই নেতিবাচক কারণেও সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে পবিপ্রবি। আর এর অন্যতম কারণ শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। প্রক্টর অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টিরও বেশি সংঘর্ষ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধিকাংশ ঘটনাই এলাকাভিত্তিক ছাত্রদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। এছাড়াও রয়েছে বিচারহীনতা, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজির মত ঘটনা। বিশেষত ক্যাম্পাসের কোরামিং রাজনীতি অনেক বেশি শক্তিশালী। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের বড় দুটি কোরাম হচ্ছে পটুয়াখালী কোরাম এবং বরিশাল কোরাম। এছাড়াও কিছু ছোট ছোট কোরাম বিদ্যমান। কোরামিংয়ের জন্য দলমত সব নির্বিশেষে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যায় পবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের। তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসে বিরোধীদলীয় কোনো ছাত্রসংগঠনের অস্তিত্ব না থাকায় সংঘর্ষগুলো মূলত ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যেই হয়।

গত এক যুগে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে ২০টি বৃহৎ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ২০২২ এর ২১ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পদপ্রাপ্ত আর পদ বঞ্চিতদের সংঘর্ষ, ২০১৮ এর ১ জুন আঞ্চলিকতার দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ২০১৫ এর ১৫ সেপ্টেম্বর সামনের আসনে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দু'পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল হরতালবিরোধী মিছিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে এবং ২০১১ এর ২৮ অক্টোবর র্যাগিং নিয়ে সংঘর্ষ।

এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ২০১৮ সালের সংঘর্ষে শেরে-ই-বাংলা হলের ৩২টি কক্ষের দরজা, জানালা ও  আসবাব পত্র ভাঙচুর করা হয়। 

এদিকে, বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত নেই কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ। বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের পর তদন্ত কমিটি হলেও সেসব প্রতিবেদন শেষপর্যন্ত কোনো আলোর মুখ দেখেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর বলেন, ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় এবং পরবর্তীতে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের আত্মগোপনে থাকা কর্মীরা উস্কানি দিয়ে এটাকে বড় সংঘর্ষে রূপান্তরিত করে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে প্রথম দিন আসার পরই শিক্ষার্থীরা র্যাগিংয়ের শিকার হন। কিছু দিন যাওয়ার পর শুরু হয় কোরাম সেটাপ। পরবর্তীতে রুম দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই কোরাম রাজনীতি জড়িত। কোরাম না করে ক্যাম্পাসে চলা প্রায় অসম্ভব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার (অ. দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত প্রাঙ্গণ, এখানে বিভিন্ন দলমতের ছাত্র রয়েছে। অধিকাংশ সময়ে এই ভিন্ন মতের জন্যই ছাত্রদের সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যায়৷ তাছাড়াও এলাকাভিত্তিক গ্রুপিং অনেকাংশেই দায়ী এই সংঘর্ষের জন্য।

সংঘর্ষের বিচার বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ছাত্রদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতির প্রভাব দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ক্ষমতা থাকলেও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই বিচার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না অনেক সময়।


সর্বশেষ সংবাদ