আবারও বরখাস্ত
একজন ‘ড্যামকেয়ার’ কর্মচারী যবিপ্রবির বাদল
- যবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৯ PM , আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩২ PM
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পেটানোর অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি সুপারভাইজার বাদল ও হল নিরাপত্তা প্রহরী শাহিনুরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অফিস আদেশ বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সিকিউরিটি অ্যান্ড এস্টেট শাখায় নিরাপত্তা সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত জনাব মোঃ বদিউজ্জামান বাদল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী জনাব মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন-কে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও গুরুতর জখম করার অভিযোগের ভিত্তিতে যশোরের কোতয়ালি থানাতে মামলা (৬০/৩৮৪) হওয়ায় ও ঘটনার পর হতে জনাব মোঃ বদিউজ্জামান বাদল ও মোঃ শাহিনুর রহমান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত অদ্যাবধি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাধারণ আচরণ শৃঙ্খলা ও আপিল সংক্রান্ত বিধি-২ এর ঘ) ও ঙ), বিধি-৩ এর গ), বিধি-৫ এর খ), গ), ঠ) ও ড) অনুযায়ী তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় বিধি-৪ এর খ) ও ঘ) মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, যবিপ্রবির ‘নিরাপত্তা প্রহরীর’ স্থায়ী পদ শূন্য থাকায় ২০১০ সালের ২১ জুন ঐ পদে যোগদান করেন বদিউজ্জামান বাদল। যোগদানের পর থেকেই ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এসকল কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এই বদিউজ্জামান বাদলকে। এর আগে হাইকোর্ট দেখিয়ে বহুবার বরখাস্ত হয়েও সপদে বহাল হয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষকতা, ছাত্রলীগের রাজনীতি দুটোই করেন ইডেনের শিলা
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নিরাপত্তা সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল ও নিরাপত্তা প্রহরী শাহিনুর রহমানকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে কারন দর্মানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিশের উত্তর পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম আনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে স্থায়ী বরখাস্তের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, চাইলেই স্থায়ীভাবে বরখাস্ত যায় না। অভিযুক্তরা যদি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর না দেয় বা উত্তর দিলেও তা যদি সন্তোষজনক না হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় সে বিষয়েও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
একাধিক সূত্রে থেকে এই নিরাপত্তা কর্মী বাদলের বিভিন্ন কীর্তি জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির শুরু থেকেই বাদল ‘ড্যামকেয়ার’ ছিলেন। যোগদানের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দেন তিনি। যার ফলে তাকে ‘তিরস্কার’ ও ২ বছর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করার দণ্ড দেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পুকুর থেকে মাছ চুরির অভিযোগে ১০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বরে যশোর কোতয়ালি থানায় মামলা হওয়ায় তিনি চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন।
ঠিক ছয় মাস পর ১ জুন ২০১৬ তারিখে তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়। তবে হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে স্থায়ীভাবে অপসারণ (Removal) অফিস আদেশ বাতিল করে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। এরপর ২২/০৭/২০২০ তারিখে শৃঙ্খলা ভঙ্গের (অফিস ভাংচুর) দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এই বাদলকে। দুই বছরের মাথায় (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) যশোরের চূড়ামনকাটিতে হত্যা মামলায় আসামী হন এবং কিছুদিন জেলহাজত বাস করেন। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ায়, খবর প্রকাশিত হওয়ায় ও কর্তব্যস্থলে অনুপস্থিত থাকায় আবারও সাময়িক বরখাস্ত হন বদিউজ্জামান বাদল। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনের ওপর হামলা চালিয়ে আবারও সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল ও কর্মচারী শাহিনুর রহমান সাগরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনকে গত শুক্রবার রাত ৯.৩০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে হাতুড়িপেটায় গুরুতর জখম করেন। ভুক্তভোগী মামুন কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।