‘এক ব্যাচ বের হলে অপর ব্যাচ ঢোকেন’—তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকটে নোবিপ্রবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

শ্রেণিকক্ষ সংকটে সারাদিনে শুধুমাত্র ২-৩টি করে ক্লাস হয় বেশিরভাগ বিভাগে। হাতেগোনা এসব ক্লাস করতে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। শুধু তাই নয়, তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকটে এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হওয়ার পর অপর ব্যাচ শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। এমন চিত্র নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি)। নতুন ব্যাচের (২০২১-২২) ভর্তি সম্পন্ন হওয়ার পর ক্লাস শুরু হলে এ সংকট আরো তীব্রতর হওয়ার আশংকা সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নোবিপ্রবির ৬টি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটের অধীনে ২টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া একাধিক ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করছে দুই ইনস্টিটিউট। সবমিলে ৩০টি বিভাগের জন্য রয়েছে ৬৮টি শ্রেণিকক্ষ।

এরমধ্যে কোনো বিভাগ ৬ ব্যাচের কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২টি শ্রেণিকক্ষে, কোনো বিভাগের ৪ ব্যাচের জন্য রয়েছে ১টি শ্রেণিকক্ষ এবং ৫টি ব্যাচ চালাতে কোনো কোনো বিভাগ পেয়েছে মাত্র ২টি শ্রেণিকক্ষ।

বিভাগগুলো ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ২টি শ্রেণিকক্ষে ৬ ব্যাচের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে ফার্মেসি বিভাগ। ৫ ব্যাচের শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন ১৩ বিভাগের মধ্যে রয়েছে- পরিসংখ্যান, ফলিত গণিত, খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান, পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অণুজীববিজ্ঞান, জীবপ্রযুক্তি ও জিনপ্রকৌশল, মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান, ইংরেজি, অর্থনীতি, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল, ব্যবসা প্রশাসন, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ ও কৃষির জন্য ৩টি করে এবং ৪ বিভাগ সমুদ্রবিদ্যা, তড়িৎ প্রকৌশল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল, কম্পিউটার সাইন্সের জন্য ২টি করে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।

এছাড়া ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৩ রুমে চলছে ৪ ব্যাচের শ্রেণি কার্যক্রম। ৪ ব্যাচের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা অন্য ৩ বিভাগ সমাজবিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, প্রাণ রসায়নের জন্য ২টি করে এবং ১ বিভাগ শিক্ষার জন্য রয়েছে ১টি শ্রেণিকক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সানজাতুল হাসান সিয়াম বলেন, আমাদের ৪টা ব্যাচ ডিপার্টমেন্টে ক্লাস করতেছে। মোট রুম আছে ৩টা। যার মধ্যে ২টাই ল্যাবরুম। আমাদের কমপক্ষে আরো ১টি রুম প্রয়োজন। কারণ, ৪ ব্যাচ থেকে যে কোনো ১ ব্যাচকে সবসময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আগের ব্যাচের ক্লাস শেষ হলে অপর ব্যাচ ক্লাস করার জন্য প্রবেশ করেন।

২০১৭-১৮ সেশনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা দুই ইনস্টিটিউট ইনফরমেশন সায়েন্সের জন্য ২টি এবং ইনফরমেশন টেকনোলজির জন্য ১টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই ইনস্টিটিউটের ২টি বিভাগে স্নাতকের ৪টি করে ব্যাচের পাশাপাশি চলছে একাধিক ব্যাচের ডিপ্লোমা কোর্স। শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি নিজস্ব গবেষণাগারে ক্লাস নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে দুই ইনস্টিটিউট।

আরও পড়ুন: শ্রেণিকক্ষ নেই, ক্লাস চলছে অফিসরুমে

একটি করে শ্রেণিকক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২০১৮-১৯ সেশনে শুরু হওয়া প্রাণিবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, বাংলা ও আইন বিভাগ এবং ২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের। এর প্রতিটি বিভাগে ৩টি করে ব্যাচ চলমান রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন, একটি ফ্যাকাল্টির জন্য মাত্র একটি রুম। আইন বিভাগে তিন ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম মাত্র একটি রুমে চলছে। যা আমাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। ক্লাস করার জন্য এক রুম থেকে অন্য রুমে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।

নাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্লাস শিডিউলও কঠিনভাবে করা হয়। যার ফলে সকালে একটা ক্লাস আবার বিকেলে আরেকটা ক্লাস করতে হয়। এতে করে আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শিক্ষা কার্যক্রম সুন্দরভাবে চলার জন্য আমাদের আরো শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন। আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শ্রেণিকক্ষ সংকটকে গুরুত্ব সহকারে দেখবে।

শ্রেণিকক্ষের এমন সংকটে দুর্ভোগে রয়েছেন তারা। একইসঙ্গে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে শ্রেণিকক্ষে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনসংযোগে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও অস্বস্তি বোধ করেন। ২০২১-২২ বর্ষের ভর্তির পর সংকট আরও প্রকট হবে। নতুন একাডেমিক ভবন-৩ এর কাজের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এমন তীব্রতর সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন: শ্রেণিকক্ষে যুবলীগ নেতার মালামাল, পাঠদান চলে মাঠে

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য নির্মিত মেডিক্যাল সেন্টারে কয়েকটি বিভাগকে শ্রেণিকক্ষ দিয়ে সংকট কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ নেওয়ার জন্য যেতে হয় বিএনসিসি নোবিপ্রবি প্লাটুনের জন্য নির্মিত শহীদ সার্জেন্ট রুমী ভবনে। সেখানে সেমিনার কক্ষেও মাঝেমধ্যে পরিচালিত হয় বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রম। এছাড়াও কয়েকটি বিভাগে থাকা গবেষণাগারেও মাঝেমধ্যে পাঠদান করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। 

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের তো ভোগান্তির শেষ নেই। এই ভোগান্তির যে শেষ কোথায় হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকার কারণে আমরা কোনো ব্যাচই নিয়মিত ক্লাস করতে পারি না। এতে করে আমাদের ৩টি ব্যাচই সেশনজটে পড়ে যাচ্ছে।

শ্রেণিকক্ষ সংকট নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া বলেন, সংকট নিরসনে প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। প্রশাসন হয়তো খুব দ্রুত রুমের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি যতটুকু জানি, একাডেমিক ভবন-৩ এর ৪-৫টা রুমের কাজ চলতেছে। আশা করি কাজটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আমাদের পাশাপাশি বাংলা, সমাজকর্ম বিভাগসহ আরো কয়েকটা বিভাগের এরকম সমস্যা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এটি দ্রুত  সমাধান হয়ে যাবে।

শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, এ সংকট সমাধানে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একাডেমিক ভবন-৩ এর ২য় তলার কাজ প্রায় শেষ। বন্ধের পরে সেখানে উঠা যাবে। একাডেমিক ভবন-৩ এর কাজ সম্পূর্ণ শেষ করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আবার প্রভোস্ট ভবনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি; সেখানেও শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারবে। আশা করি শ্রেণিকক্ষ সংকট দ্রুত কমে আসবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্লাস সংকটের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। ইতিমধ্যে সংকট নিরসনে বেশকিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কিছু শ্রেণিকক্ষ প্রস্তুতও হয়ে যাবে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খরচে একাডেমিক ভবন-৩ এ কিছু রুমের কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো হলে সংকট কমে আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ