ফারদিনের মৃত্যু: হত্যা থেকে আত্মহত্যা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫৮ PM , আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫৮ PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত করছে ডিবি ও র্যাব। দুটি সংস্থাই দাবি করেছে ফারদিন খুন হননি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে, ফারদিনের মৃত্যু ও এর তদন্ত নিয়ে উঠেছে অনেক প্রশ্ন। তদন্ত চূড়ান্ত না করেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন সংস্থা দুটির এমন সিদ্ধান্ততে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ডিবি ও র্যাবের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সন্দেহকে আরও জোরালো করে।
বৃহস্পতিবার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবির প্রধান হারুন উর রশীদ বলেন, ‘‘সবকিছু বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে সে আত্মহত্যা করেছে,।
তিনি দাবি করেন, ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিল, সে তার বান্ধবীকে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে ৩০ বছরের বেশি বাঁচতে চায় না। তার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল, টাকার অভাবে বিদেশেও যেতে পারছিলেন না। এছাড়াও আত্মহত্যার রাতে তিনি বিভিন্ন স্থানে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন। ব্রিজ থেকে লাফ দেয়ার ভিডিও ইত্যাদি মিলিয়ে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
তদন্ত শেষ করে মৃত্যুর বিষয়টা নিশ্চিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হারুন বলেন, "তদন্ত শেষ হয়নি। আমি বলিনি তদন্ত শেষ। তদন্ত চলবে। তদন্তের পর্যায়ে যদি অন্য কিছু পাওয়া যায় তখন তা অন্যভাবে দেখা হবে।"
ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে র্যাবের এমন দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "তারা কেন এমন দাবি করেছেন আমি জানি না। আমরা এমন কিছু বলিনি। আমরা প্রথম থেকেই তার হতাশাগ্রস্ত থাকার উপর জোর দিয়ে তদন্ত করেছি।"
ফারদিনের মৃত্যুর পর ছায়া তদন্ত শুরু করা সংস্থা র্যাব একাধিক মিডিয়াকে বলেছে, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তারাও অবস্থান পাল্টে বলেছে যে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে, তাকে খুন করা হয়নি। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং পরিচালক খন্দকার আল মঈন দাবি করেন, ফারদিন স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ডিবি-র্যাবের পরস্পরবিরোধী তথ্যে তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ
র্যার ও ডিবি মিডিয়াতে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে মানুষের মধ্যে শুধু বিভ্রান্তিই তৈরি করেনি, মৃত্যুর তদন্তকেও করেছে প্রশ্নবিদ্ধ।
আরও পড়ুন: হতাশ ছিলেন ফারদিন, দিয়েছেন ৩০ বছরের বেশি না বাঁচার পরামর্শ
ফারদিনের মৃত্যুর পর র্যাব দাবি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে আর ডিবি জানায় যে সে আত্মহত্যা করেছে। র্যাব দাবি করে ফারদিন তার বাসা চনপাড়া বা তার আসেপাশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। অন্যদিকে, ডিবি দাবি করে তিনি চনপাড়ায় ওই রাতে যাননি।
ফারদিনের মৃত্যুর কিছুদিন পর র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার মঈন জানিয়েছিল যে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে তারা সনাক্ত করেছে, যাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হত্যায় ৮ থেকে ১০ জন অংশ নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এবং হত্যার মোটিভ জানার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি বলেছেন। এমন কোন তথ্য ডিবির তদন্তে পাওয়া যায়নি বলে জানান ডিবি প্রধান হারুন।
ফারদিনের বাবা শুরু থেকেই তার ছেলের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান, যা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকবে না। কিন্তু কি ঘটেছে তা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে র্যাব-ডিবি গণমাধ্যমের কাছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়ার কারণে অনেকে মনে করছেন সত্যকে আড়াল করার জন্য এসব করা হচ্ছে।
ফারদিনের বাবা প্রশ্ন
আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর এখন আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে বলে দাবি করেন ফারদিন নূরের বাবা কাজী নূর উদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়ে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেরা অভাব–অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে চলতে পারা আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তিনি প্রশ্নও করেন, ঘটনার দিন বুয়েটের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে সে চুল কাটিয়েছিল এবং শেভ করেছিল। আত্মহত্যার আগে কি কেউ চুল কাটায়, শেভ করে?
বুয়েট ছাত্রদের সংশয়
বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা আখ্যা দেওয়ার পর ডিবি প্রধান হারুনের সঙ্গে আজ দুই ঘণ্টা আলোচনার করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা শেষে বেরিয়ে বুয়েট ছাত্র তাহমিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এখনো কিছু কিছু গ্যাপ আছে। একটা গ্যাপ হলো, ব্রিজের যে পাড়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে যে মাঝখানে ব্যাক করেছে, ওই জায়গায় তার সঙ্গে কে ছিল বা সে একদম একা ছিল কি না সেটা পরিষ্কার নয়।
এছাড়াও, লেগুনাচালক নাকি বলেছেন, দুজনকে নামানো হয়েছিল। তার সঙ্গে আরেকজন নেমেছিলেন। কে নেমেছিলেন, সেটা পরিষ্কার নয় বলে মনে করেন তিনি।
"তারা (ডিবি) আমাদের কিছু অ্যাভিডেন্স দেখিয়েছেন, যা দেখে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ওই রকম কংক্রিট, সলিড কোনো তথ্য, অতটা তারা দেখাননি। আত্মহত্যার মোটিভটা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় কি না, এ জায়গায় ভবিষ্যতে কাজ করা যেতে পারে। ডিবি বলেছে, তারা এটি নিয়ে কাজ করবে,” বলছিলেন তাহমিদ। [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]