শিক্ষক আন্দোলনের বলি হচ্ছেন বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
শিক্ষক সমিতি কর্তৃক ঘোষিত কর্মবিরতির জেরে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) টানা সপ্তম দিনের মত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিলো গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। আর এর ফলে বর্তমানে সেশনজটের শঙ্কায় ভুগছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক চৌধুরী তপু বলেন, ‘শিক্ষকরা তাদের নিজস্ব দাবী আদায়ে আন্দোলন করবেন এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে আন্দোলনের উপায় অবলম্বন করতে গিয়ে যদি সরাসরি শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেন ও তাদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করেন তা অনুচিত ও অনৈতিক বলে মনে করছি। এমনিতেই মহামারীর প্রভাব ও অবকাঠামোগত (ক্লাসরুম সংকট, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা) দূর্বলতায় কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক সেশন জটে ভুগছে। বর্তমানে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন তা আরও বাড়িয়ে দেয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী জীবন নিয়ে আশা হারিয়ে বিষণ্ণতায় দিন কাটাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
শিক্ষকদের প্রতি কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন সন্তানতুল্য ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ জানাবো, তারা যেন তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে দ্রুত ক্লাসরুমে ফিরে গিয়ে আমাদের একাডেমিক শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ করতে আমাদের সাহায্য করেন।’
এদিকে, শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের মাঝেই শিক্ষক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কর্মবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র দাবি করে গতকাল বঙ্গবন্ধু স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা উপাচার্য দপ্তরে তালা দেয়ার পর প্রশাসনিক কর্মবিরতি চলমান থাকলেও বিষয়টা সমাধানে সেখানে যান প্রক্টরিয়াল টিম এবং শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা। এই সংক্রান্ত একাধিক ভিডিওতে দেখা যায় প্রক্টরিয়াল টিমে থাকা শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদেরকে বিষয়টি সমাধানে উপাচার্যের সাথে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করছেন।
একাডেমিক কর্মবিরতি বহাল রেখে প্রশাসনিক কর্মবিরতি ভঙ্গের এ বিষয়টি প্রকাশের পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকমন্ডলী ন্যায্য দাবীতে তাদের কর্মবিরতিতে আছেন। সকল ন্যায্য দাবীতে বশেমুরবিপ্রবিয়ানদের সমর্থন সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত আমার বোধগম্য নয়। বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা তাদের জন্যে করোনার দুই বছর শিক্ষা জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে এই একাডেমিক কর্মবিরতি মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত অবস্থার সৃষ্টি করেছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ কামরুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করে রিজেন্ট বোর্ডে ইউজিসি কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন নীতিমালা পাস করার প্রতিবাদে সকল ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে ৮ নভেম্বর অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছিল বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।