বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ‘নাম সর্বস্ব’ বিশ্ববিদ্যালয় পবিপ্রবি
‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা হলেও শুধুমাত্র কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ব্যতিত নেই উল্লেখযোগ্য কোন প্রকৌশল অনুষদ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পার করলেও কতটুকু তা পূরন করতে পেরেছে—এমন প্রশ্ন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন-অনুষদ বৃদ্ধিতে সরকারি বিধিনিষেধ রয়েছে। এজন্য তারা আসন-অনুষদ বৃদ্ধির চেয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। তবুও তারা শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী চেষ্টা করছেন। এজন্য নতুন অনুষদের বিষয়ে ইউজিসিতে আবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে।
১৯৭২ সালে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০০০ সালের ৮ জুলাই ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে যাত্রা শুরু হয় পবিপ্রবির। দীর্ঘ ২২ বছরে শুধুমাত্র কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ব্যতিত আর কোন প্রকৌশল অনুষদ চালু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিকবার দাবি উঠলেও তা পূরণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা ‘প্রযুক্তি তুই পালিয়ে যা’ স্লোগানে আন্দোলন শুরু করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিকস এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল যুগেও এনালগ পবিপ্রবি
আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ও বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ মেনে নিয়ে বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করার ব্যাপারে কার্যকর পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সে প্রতিশ্রুতির প্রায় ৩ বছর পার হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের আন্দোলনে অচল পবিপ্রবি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রযুক্তি শব্দটি কেবলই নাম সর্বস্ব। আমাদের পরে অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। সে হিসেবে আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পিছিয়ে রয়েছি।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জামিল সুজন বলেন, ‘‘আমাদের পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েও অন্যান্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন প্রযুক্তিগত অনুষদ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশক পেরিয়ে গেলেও, বিশ্ববিদ্যালয়টির যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি তথা প্রযুক্তি অনুষদীয় শিক্ষাকার্যক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।’’
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. কামরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন কোন অনুষদ প্রতিষ্ঠা ও আসন বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারের বিধিনিষেধ রয়েছে। সরকার বর্তমানে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জোর দিচ্ছে। তবুও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ইউজিসিতে প্রযুক্তিভিত্তিক একটি অনুষদ প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করে রেখেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, গুণগত শিক্ষাদান বর্তমান সরকারের একমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি। অনুষদ বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে নয় বরং শিক্ষার যথাযথ মান ঠিক রাখাই বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা।
উপাচার্য স্বদেশ চন্দ্র বলেন, আমারাও সরকারের এ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত। তাই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ বৃদ্ধির চেয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ল্যাব ও গবেষণার সুবিধাসহ কিভাবে অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো যায় সেদিকে গুরুত্বারোপ করছি। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং নামে দুটি বিভাগ চালুর ব্যাপারে অবহিত করেন।