এমপিও নিয়ে আদালতের নির্দেশনা মানছে না অধিদপ্তর
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৫ ঊর্ধ্বো শিক্ষকদের এমপিও নিয়ে দেয়া আদালতের রায় প্রতিপালন না করার অভিযোগ উঠেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। তবে আদালতের রায় নিয়ে মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়ে বলে দাবি অধিদপ্তরগুলোর।
অধিদপ্তর বলছে, এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর কোথাও ৩৫ ঊর্ধ্বো শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কথা বলা হয়নি। এমপিও নীতিমালার বাহিরে গিয়ে এমপিওভুক্ত করার এখতিয়ার তাদের নেই। আদালতের রায়ের বিষয়ে লিখিতভাবে মন্ত্রণালয় থেকে কিছু জানানো হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি হলে ৩৫ ঊর্ধ্বো শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন এমপিও নীতিমালায় ৩৫ বছর কিংবা তার অধিক বয়সী প্রার্থীদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া নেই। নির্দেশনা থাকলে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিতাম। এনটিআরসিএ আমাদের উচ্চ আদালতের রায়ের কপি দেখিয়েছে। তবে আমরা এমপিও নীতিমালার বাহিরে গিয়ে কিছু করতে পারবো না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসলে তখন ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৭৩ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়া হয়। সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৫ ঊর্ধ্বো শিক্ষকরা যোগদানের পর এমপিওর আবেদন করলে তাদের ফাইলগুলো বাতিল করা হয়। বাতিলের কারণ হিসেবে বয়স না থাকার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। যা আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পরিপন্থী বলে জানান প্রার্থীরা।
আরও পড়ুন: অধিদপ্তরের মাধ্যমে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করতে চায় এনটিআরসিএ
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১২ জুন এমপিও নীতিমালা জারির আগে সনদ অর্জন করা প্রার্থীদের মধ্যে যাদের বয়স ৩৫-এর বেশি হয়ে গেছে, তারাও আবেদনের সুযোগ পাবেন। বয়স ১ জানুয়ারি ২০২০ সালে ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে। তবে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ইনডেক্সধারী প্রার্থী এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় ১২ জুন ২০১৮ সালের আগে যাঁরা শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এমন সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকার পরও অধিদপ্তর থেকে তাদের এমপিও ফাইল রিজেক্ট করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এনটিআরসিএসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এই অবস্থায় বাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে গিয়ে বেতন ছাড়াই চাকরি করতে হচ্ছে তাদের।
মো. কামাল নামে সুপারিশপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জানান, এনটিআরসিএর চূড়ান্ত সুপারিশপত্র পাওয়ার পর পদে পদে তাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। সব বিড়ম্বনা পার হওয়ার পরও তাদের নিস্তার মিলছে না। এমপিও পেতে যত ধরনের কাগজ লাগে সবগুলো সঠিকভাবে জমা দিয়েছেন। তবে কেবলমাত্র বয়সের বাঁধার কারণে তার ফাইল ছাড়া হচ্ছে না। সুপারিশপত্রে আপিল বিভাগের রায়ের কথা উল্লেখ থাকলেও অধিদপ্তর সেটি আমলে নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভুল চাহিদায় এমপিওভুক্তিতে জটিলতা
মোয়াজ্জেম হোসেন নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, আমার এমপিও ফাইল রিজেক্ট করে বলা হয়েছে; এমপিওভুক্ত হতে বয়স নেই। এমপিওর আবেদনটি বাতিল করা হলো। অথচ সুপারিশপত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ২০১৮ সালের জুনের আগে যারা শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ পেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য। ফলে এভাবে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। বাড়ি থেকে ৪০০ কিলোমিটার দুরের প্রতিষ্ঠানে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এমপিও না হওয়ায় পরবর্তী মাসের রুমভাড়া, খাবার খরচ কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না।
ভুক্তভোগীদের এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছে এনটিআরসিএ। ওই বৈঠকে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে যাদের বয়স ৩৫ বছর কিংবা তার বেশি এমন শিক্ষকদের এমপিওর বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখানো হয়। বৈঠক শেষে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেয়া হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৫ ঊর্ধ্বো শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে আদালতের দেয়া রায় মানতে হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নতুন এমপিও নীতিমালায় ৩৫ বছর কিংবা তার বেশি বয়সের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে যেহেতু বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালত একটি রায় দিয়েছে, তাই ওই রায় মানতেই হবে। রায় না মানলে আদালত অবমাননা করা হবে।
আরও পড়ুন: মামলা জটিলতায় পেছাচ্ছে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। আদালতের রায় থাকার পরও যদি কারো এমপিওভুক্তিতে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন অধিশাখা-২ এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব মাদ্রাসা অধিশাখা) ড. মো. আয়াতুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ৩৫ ঊর্ধ্বো শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আদালত কি রায় দিয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে আদালতের নির্দেশ অবশ্যই মানতে হবে।