নতুন বছরের আগেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা
নতুন বছরের আগেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক ও দাখিল স্তরের সব শিক্ষার্থী আজ থেকেই সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের সফটকপি অনলাইনে পড়তে পারবে।
আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এনসিটিবি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন বছর শুরুর আগেই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের সকল স্তরের পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ (পিডিএফ) উন্মুক্ত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর মাধ্যমে আজ থেকেই এনসিটিবির ওয়েবসাইটে (www.nctb.gov.bd ও www.nctb.portal.gov.bd) প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ব্রেইল পদ্ধতি, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি স্তরের মোট ৬৪৭টি পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন।
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য সর্বমোট ৩০ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৪ সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের চাহিদা নিরূপনপূর্বক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের কাজ হাতে নেয়া হয়। ইতোমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের শতভাগ পাঠ্যপুস্তক (১১ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬১টি) মুদ্রণ শেষে মহান বিজয় দিবসে দেশের সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ফলে ১ জানুয়ারি সকল প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী স্তরের শিক্ষার্থী এবং ব্রেইল পদ্ধতির সকল পাঠ্যপুস্তক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫টি ভাষায় মুদ্রিত শতভাগ পুস্তক হাতে পাবে।
আরও পড়ুন : নিম্নমানের বই ছাপিয়ে ১৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দুই ভাইয়ের প্রেস কর্ণফুলী-অগ্রণী
মাধ্যমিক ও কারিগরি স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজও এখন শেষ পর্যায়ে। এনসিটিবি আশা করছে, ১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির প্রায় শতভাগ এবং সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির যথাক্রমে ৭০% ও ৬০% শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাবে । মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে চুক্তি অনুযায়ী সর্বশেষ সময়সীমা ৩ ফেব্রুয়ারি হলেও আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শতভাগ বই সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে বলে এনসিটিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, শিক্ষার্থীদের নির্ভুল ও মানসম্মত বই প্রদানের লক্ষ্যে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমন্বয়ে কয়েক দফার ফিডব্যাকের আলোকে পাঠ্যপুস্তকগুলো পরিমার্জন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ ধন্যবাদ জানানো হয় সেই সকল প্রেস মালিক ও মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে, যারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বই মুদ্রণ ও সরবরাহ সম্পন্ন করেছেন। তিনি পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অন্যদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে পাঠ্যপুস্তকের গুণগত মান ও শিশুদের বয়স উপযোগী কন্টেন্ট তৈরির বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী জানান, নিবিড় যাচাই-বাছাইয়ের কারণে এবার অতিরিক্ত ১ কোটি বইয়ের চাহিদা এড়ানো সম্ভব হয়েছে এবং মান রক্ষার্থে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৪২২টি মুদ্রিত বই বাতিল করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং এনসিটিবির কর্মকর্তাবৃন্দ, মুদ্রণ শিল্পের স্বত্ত্বাধিকারীগণ উপস্থিত ছিলেন।