১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:২৩

প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ হতে পারে ১০০ নম্বরের পরীক্ষার মাধ্যমে

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে ১০০ নম্বরের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করেছে নিয়োগ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি। নতুন এই কাঠামো অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন গ্রহণ করবে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে এসব পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আগের তুলনায় আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অনিয়মমুক্ত হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজ পরিচালনায় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বের প্রস্তাবনা অনুযায়ী এ পদে কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। তবে এর ফলে প্রার্থীদের প্রকৃত যোগ্যতা যাচাই নিয়ে প্রশ্ন উঠত। এ পরিস্থিতি এড়াতে লিখিত বা এমসিকিউসহ পূর্ণাঙ্গ ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। এই পরীক্ষা লিখিত হবে নাকি শুধুই এমসিকিউ পদ্ধতিতে হবে তা চূড়ান্ত করবে এনটিআরসিএর বোর্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক–২) মো. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি সচিবের দপ্তরে যাওয়ার পর চূড়ান্ত হবে।’ 

আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের অগ্রগতি জানাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘পূর্বে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগে পরীক্ষা নেওয়ার একটি প্রচলন ছিল। তাই এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ হলেও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়নের এই ধারা বজায় রাখতে চায় কমিটি। ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় মৌখিক সাক্ষাৎকারের জন্যও কিছু নম্বর বরাদ্দ করার সুপারিশ করা হয়েছে।’

এর আগে দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ হতো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির (ম্যানেজিং কমিটি) মাধ্যমে। তবে এই প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেন, রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল ব্যাপক। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইচ্ছানুযায়ী প্রধান নিয়োগ দেওয়ার ঘটনাও ছিল নিয়মিত। এসব অনিয়ম বন্ধে এবং দক্ষ প্রশাসনিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

গত ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ. জেড. মোরশেদ আলীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, সহকারী প্রধান, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও সমমানের সব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে। এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। তার আগের দিন ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারও জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান বা অধ্যক্ষ পুরো প্রতিষ্ঠানের নীতি ও মান নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই মেধাভিত্তিক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব গড়েই দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগে অনিয়ম বহুদিনের ক্ষত। যোগ্যতা নয়, বরং রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাবই অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ নির্ধারণ করত। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রশাসন, শিক্ষকের মূল্যায়ন, পাঠদানের পরিবেশ ও একাডেমিক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হতেন। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে এসব অনিয়ম বন্ধ হবে বলে আশা করছেন তারা। একইসঙ্গে যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রধান পদে সুযোগ পাবেন, যা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশ ও শিক্ষা মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এনটিআরসিএ ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন পদ্ধতির কাঠামো চূড়ান্ত না করলেও মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক সাক্ষাৎকার এবং প্রার্থীর পূর্ব অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ যাচাইয়ের একটি প্রক্রিয়া তৈরি করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এনটিআরসিএর বোর্ড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মেধাভিত্তিক পদ্ধতি চালু হলে বেসরকারি স্কুল-কলেজে নেতৃত্বের মান বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রশাসনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।