পাঠদান চলছে

মাধ্যমিকে প্রশিক্ষণ পাননি ৮৬ শতাংশ শিক্ষক, প্রাথমিকে শুরুই হয়নি

অনেকটা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান
অনেকটা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান  © ফাইল ছবি

মাধ্যমিকের প্রায় ৮৬ শতাংশ শিক্ষক এখনো অনলাইন প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি। আর প্রাথমিকস্তরে এ প্রশিক্ষণ এখনো শুরুই হয়নি। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো নতুন কারিকুলামে পড়ালেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরে প্রাথমিকে দুই শ্রেণী এবং মাধ্যমিক স্তরের দুটি শ্রেণী মিলে মোট চারটি শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যসূচি সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু নতুন এই পাঠ্যসূচি পাঠদানের জন্য গত বছর থেকেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

প্রথমে অনলাইনে এই প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে সেটাও ফলপ্রসূ হয়নি। এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায় আজ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক ও ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাটার্য জানান, পাঁচ দিন ৪০৮টি উপজেলা ও ২৫টি থানায় প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছে। এতে ২ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নতুন ভবন উদ্বোধন

তিনি জানান, প্রথমে ৬, ৭, ১৩, ১৪ ও ২০ জানুয়ারি প্রশিক্ষণ পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হলেও পরে একদিনের প্রশিক্ষণের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারি প্রশিক্ষণ ১৫ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ও উপপরিচালকদের প্রধান অতিথি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে বেশির ভাগ বিষয়ের বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। আবার প্রাথমিকের শিক্ষকরা অনলাইন প্রশিক্ষণ পাননি। নেই শিক্ষক সহায়িকা গাইড। মাধ্যমিকেও সরাসরি প্রশিক্ষণ পাননি শিক্ষকরা। এতে হ-য-ব-র-লভাবে চলছে এসব স্তরের পাঠদান।

মাধ্যমিকে অনলাইন প্রশিক্ষণ
পাঠদানে অনুমোদনপ্রাপ্ত মাধ্যমিক স্তরের এ পর্যন্ত মোট তিন লাখ ৫৫ হাজার শিক্ষককে অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, এ পর্যায়ে মোট শিক্ষক চার লাখ ৪১ হাজার ছয়জন। তাদের মধ্যে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি ৮৬ হাজার ছয়জন শিক্ষক। অনলাইনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ৬ ও ৭ জানুয়ারি এবং ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি—এই পাঁচ দিন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রাথমিকে প্রশিক্ষণই হয়নি
অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাননি। পরবর্তী সময়ে অনলাইন প্রশিক্ষণ পেলেও সরাসরি প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হবেন সংশ্লিষ্ট স্তরের প্রায় তিন লাখ শিক্ষক।

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অফলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। সারা দেশে পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৯৮, এসব প্রাথমিকে শিক্ষকসংখ্যা ছয় লাখ ৫৭ হাজার ১৯৩। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৬ সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষক আছেন তিন লাখ ৫৯ হাজার ৯৫ জন।

প্রশিক্ষণের বাইরে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য মতে, দেশে ২৮ হাজার ১৯৩ কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষক আছেন দুই লাখ ৪৬৭ জন। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে বই বিতরণ করা হলেও এসব শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের বাইরে থাকছেন শিক্ষকরা।

এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক) এ কে এম রিয়াজুল করিম বলেন, প্রশিক্ষক তৈরির কাজ আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ছাড়া সব শিক্ষককে অনলাইন প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এ জন্য একটি প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করার কাজ চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধীনে মডিউল এডিটিংয়ের কাজ শেষ হলে অনলাইনে আপলোড করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ