করোনা শেষে বিদ্যালয়ে ফিরবে না অনেক শিক্ষার্থী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২০, ১১:১৪ AM , আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০, ০১:৫১ PM
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় দেশের ছেলেমেয়েরা জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করেছে। যা এখন সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এর সুফল হিসেবে প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে। আর কমেছে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার। কিন্তু এসব অর্জন ম্লান করে দিতে যাচ্ছে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস।
এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে রেডিও-টেলিভিশনে পাঠদান অব্যাহত রাখলেও তাতেও দেখা দিয়েছে বৈষম্য।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং শিক্ষাবিদদের ধারণা, করোনার প্রভাবে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়াতে অনেক শিক্ষার্থীকে তার পরিবার কাজে লাগিয়ে দেবে। বেড়ে যাবে বাল্যবিবাহ। বিশেষ করে চর, হাওর ও শহরের বস্তি অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি সমস্যায় পড়বে। ফলে করোনা শেষে অনেকে শিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়ে ফিরবে না।
গত বছর প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। ঝরে পড়ার পেছনে অন্যতম কারণ দারিদ্র্য, বাল্যবিয়ে ও আবাসস্থল ত্যাগ। বিশেষ করে শহরের বস্তিবাসী এবং চর ও হাওর অঞ্চলের শিশুরাই বেশি ঝরে পড়ে। করোনার কারণে এসব পরিবারে দারিদ্র্য আগের চেয়ে বেড়েছে।
সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ আর গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৭৯ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো রকমে তিন বেলা খেতে পারলেও পুষ্টিমান রক্ষা করতে পারছে না।
করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে ক্লাসগুলো দেখতে পারলেও গ্রামাঞ্চলে তা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামের অনেক দরিদ্র পরিবারে এখনো টেলিভিশন নেই। আর সংসদ টেলিভিশন ডিশ সংযোগের মাধ্যমে দেখতে হয়; কিন্তু অনেকের টিভি থাকলেও ডিশ সংযোগ নেই। ফলে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এখন বেতারেও প্রাথমিকের ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া শহরাঞ্চলের নামিদামি বিদ্যালয়ে নিজেরাই জুম, গুগলসহ নানা মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। শিক্ষকরা ভাগ ভাগ করে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিন্তু নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা পিছিয়ে পড়ছে। দরিদ্র পরিবারের যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষার বাইরে আছে, তারা পড়ালেখায় আর না-ও ফিরতে পারে। এছাড়া অনেক দরিদ্র পরিবারই তাদের সন্তানদের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কাজে নামিয়ে দিতে পারে। এতে ঝরে পড়ার হার বাড়বে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, করোনা মহামারির এই ক্রান্তিকালে দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করবে। বাল্যবিয়ে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে চর, হাওর ও শহরের বস্তি অঞ্চলের শিশুরা বেশি সমস্যায় পড়বে। ফলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়বে।
তিনি বলেন, ঝরে পড়ার হার কমাতে সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে। এজন্য এবারের বাজেটে শুধু শিক্ষা খাতেই ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার কথা আমরা বলেছি। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের স্কুলে ধরে রাখতে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।
ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত কর্মকর্তা মাছুম বিল্লাহ বলেন, করোনার প্রভাবে যদি দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়, তাহলে অনেক শিক্ষার্থীকে তার পরিবার কাজে লাগিয়ে দেবে। এতে ভয় করা হচ্ছে, অনেকেই আর স্কুলে ফিরবে না।