অনলাইন-টিভি ক্লাসে অনাগ্রহ, নীতির সমালোচনা শিক্ষাবিদদের

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা বাড়ানোর পর এই ছুটি ৩ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এসময়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বাইরে থাকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন, টেলিভিশন ও রেডিওতে ক্লাস প্রচার হচ্ছে। তবে তাতে শিক্ষার্থীদের তেমন আগ্রহ নেই। অনলাইন ক্লাসেও উপস্থিতি সামান্যই।

অভিযোগ উঠেছে, এই অনলাইন বা রেডিও-টেলিভিশন ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখছে, তার মূল্যায়ন বা এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। করোনার কারণে ইতোমধ্যে পিইসি, ইইসি, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে এইচএসসি পরীক্ষাও। আটকে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষাও।

সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনা সংকট দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা যেত। ইউটিউবে ক্লাসগুলো রাখা হলে তা ডাউনলোড করা যেতো। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত ছিল। তাদের ল্যাপটপ থাকতে হবে, প্রয়োজনে স্কুল তাদেরকে ইন্টারনেট বিল দেবে।’ এ জন্য পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি

দেশে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী রয়েছে অন্তত এক কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার। আর মাধ্যমিকে এক কোটি তিন লাখ ৪৯ হাজার। প্রাক-প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতেও শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন কোটির ওপরে। পাঁচ মাসের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শহরে কিছুটা সুবিধা পেলে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা ঠিকভাবে করতে পারছে না বলে জানা গেছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমার স্কুলের তিন থেকে চার ভাগ শিক্ষার্থী টিভির পাঠ কার্যক্রমে কিছুটা উপকৃত হচ্ছে। বাকিরা মনোযোগী হতে পারেনি। এখানে প্রশ্নোত্তর, পরীক্ষার চাপ না থাকায় তাদের আগ্রহও নেই।’

গত ২৯ মার্চ থেকে টেলিভিশনে মাধ্যমিকের ক্লাস এবং ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হয়। তবে আকর্ষণহীন এসব ক্লাসে শিক্ষার্থীদের তেমন আগ্রহ নেই। তবে শহরাঞ্চলের কিছু স্কুলে অনলাইন ক্লাস হলেও অনেকেই পড়ালেখার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে অনলাইনসহ নানা প্রক্রিয়ায় শিক্ষা এগিয়ে নিলেও বাংলাদেশে শুধু নীতি প্রণয়নে ব্যস্ত নীতি নির্ধারকরা। পরীক্ষা বাতিল, স্কুল খোলার পরের পরিকল্পনার মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত প্রশাসন। পড়ালেখা কীভাবে চলছে তা নিয়ে খেয়াল নেই কারোর।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আকর্ষণহীন টিভি ক্লাসগুলো অনেক শিক্ষার্থীই দেখছে না। আমাদের ভালো ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা নেই, তাই ইউনিয়নভিত্তিক ও শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক পৃথক পরিকল্পনা করা উচিত ছিল।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫০.৬ শতাংশ পরিবারে টেলিভিশন রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরিপে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে ক্লাস দেখছে বলে দাবি করা হয়ে। এ ছাড়া রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরের স্কুলে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয় বলে জানা গেছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘অনেকেই পড়ালেখার বাইরে। যারা টিভির ক্লাসে যুক্ত তারাও কতটুকু নিতে পারছে- এখনো পরিমাপ করা যায়নি। এ জন্য জরিপ করা দরকার। বার্ষিক পরীক্ষা যদি হয়ও তখনো অনেকেই আসবেই না। কারণ তারা পড়েইনি।’ এই মুহূর্তে শিক্ষার জন্য বড় প্যাকেজ দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করা উচিত। সচিব থাকাকালে আমি কিছু বই ডিজিটাল করেছিলাম, স্কুলগুলোর ওয়েবসাইট করা হয়েছিল। মাধ্যমিকের ৭০ শতাংশ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আছে।’ কিন্তু সেগুলো আর এগোয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ