স্কুলে ‘ইয়েস স্যার’ নয়, বলতে হবে জয় হিন্দ অথবা জয় ভারত
- ফরহাদ কাদের
- প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০২:৪৪ PM , আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৩:৪২ PM
বছরের প্রথম দিন থেকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের শ্রেণি কক্ষে নাম ডাকার সময় আর ‘ইয়েস স্যার,’ ‘প্রেজেন্ট স্যার’ বলা যাবে না। বলতে হবে ‘জয় হিন্দ’ অথবা ‘জয় ভারত’। প্রতিদিন স্কুলে হাজিরা দেওয়ার সময় এই নিয়ম মেনে চলতে হবে শিক্ষার্থীদের। নতুন বছরে এমন নির্দেশিকা জারি হল গুজরাট জুড়ে। যাতে শিশু বয়স থেকে শিক্ষার্থীদের মনে দেশভক্তি জাগিয়ে তোলা যায়- সেজন্য রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ভূপেন্দ্রসিং চূড়াসামা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, স্কুলে শিক্ষক যখন রোল কল করবেন, তখন আর ‘ইয়েস স্যার’ বা ‘ইয়েস ম্যাডাম’ বললে চলবে না। বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রছাত্রীদের সাড়া দিতে হবে ‘জয় হিন্দ’ বা ‘জয় ভারত’ বলে। ভারতের গুজরাটের রাজ্য সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতর এমন নির্দেশনা জারি করেছে। বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে সরকারি নির্দেশনাও প্রকাশ করা হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘সার্কুলার’টি সব সরকারি স্কুল, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে কঠোরভাবে মেনে চলা হয়, তা নিশ্চিত করবেন জেলার শিক্ষা আধিকারিকরা। ছোট থেকেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক।
গুজরাটের শিক্ষামন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং চূড়াসামার বলেন, ‘আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন আমার ও আমার সহপাঠীদের জয় হিন্দ বা জয় ভারত বলে হাজিরা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল। এই প্রথা পরে বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার থেকে পুনরায় এটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’ মন্ত্রীর দাবি- ‘একটি ছাত্র স্কুলে থাকাকালীন অন্তত ১০ হাজার বার ইয়েস স্যার/ইয়েস ম্যাডাম বলে। তার বদলে যদি সে জয় হিন্দ/জয় ভারত বলে, তাহলে তার মধ্যে দেশপ্রেমের আবেগ জাগ্রত হবে।’
গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের পরিমল বিদ্যালয়ে শিক্ষক কমলেশ প্যাটেল বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের স্কুলেও নির্দেশ এসেছে যে ছাত্রছাত্রীরা রোল কলের সময়ে এখন থেকে ইয়েস স্যার বা প্রেজেন্ট প্লিজ না বলে জয় হিন্দ জয় ভারত বলবে। আমরা ছাত্রদের বুঝিয়েছি যে কেন জয় হিন্দ জয় ভারত বলাটা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘নিজের দেশের প্রতি, নিহত সৈনিকদের প্রতি যে সম্মান দেখানোর জন্যই যে উপস্থিতির সময়ে জয় হিন্দ জয় ভারত বলা উচিত, সেটা ছাত্রদের আজকেও বুঝিয়েছি আমি। দেশের প্রতি ভক্তি নিঃসন্দেহে বাড়বে এই নিয়মের ফলে।’
বিবিসি জানায়, হিন্দু পুনরুত্থানবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ রাজস্থানের এক শিক্ষককে সম্মানিত করেছে, যিনি নিজের স্কুলের ছাত্রদের রোল কলের সময়ে জয় হিন্দ এবং জয় ভারত বলা অভ্যাস করিয়েছেন। সেই উদাহরণ টেনেই গুজরাটের শিক্ষা দপ্তর তাদের রাজ্যের প্রতিটা স্কুলেই ছাত্রদের ‘জয় হিন্দ’, ‘জয়’ ভারত বলা বাধ্যতামূলক করেছে।
এদিকে আহমেদাবাদের বাসিন্দা, ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রের বাবা সজীব রঞ্জন দাবি করছেন, ‘এভাবে কি ছাত্রদের মনে দেশভক্তির চেতনা আনা যায়? জবরদস্তি নিয়ম চালু করে ছাত্রদের মনে দেশের প্রতি, সৈনিকদের প্রতি ভক্তি জাগানো যায় না কখনই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতি ভক্তি আগেও ছিল, এখনও আছে। জয় হিন্দ জয় ভারত বলার নিয়ম চালু না করে পঠনপাঠনের সুব্যবস্থা করা উচিত সরকারের। পড়াশোনার এত খরচ কেন বাড়ছে, স্কুলে বাচ্চারা কেন অনিয়মিত, সেই সব দিকে নজর না দিয়ে দেশভক্তির দেখনদারি করা হচ্ছে।’
ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, গত বছরের শুরুতে মধ্যপ্রদেশে যখন বিজেপি সরকার ছিল, তখন সেখানকার স্কুলগুলিতেও একই নিয়ম চালু হয়েছিল। এ বার গুজরাটকে সেই তালিকায় সামিল করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলেছেন, চিরকাল এমনটাই চলে আসছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেই জাতীয়তাবাদকে আঁকড়ে ধরেন রাজনীতিকরা। এককালে জার্মানিতে হিটলারও এই পন্থা নিয়েছিলেন।