বিদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকা সরাসরি বিকাশে আনা যাবে
ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের আয় এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মাধ্যমে আনা যাবে। আগে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকের মাধ্যমে আনা যেতো। বিকাশের এই উদ্যোগের ফলে আয় আনা সহজ হবে। বৈধ চ্যানেলে আয় আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আগামীকাল এ উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে বিকাশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিকাশের জনসংযোগ কর্মকর্তা রোকসানা আক্তার মিলি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেইজেও এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
পেমেন্ট পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। প্রায় সবাই বলছেন, বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেপাল হচ্ছে একটি স্বীকৃত পেমেন্ট পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশে এত বড় শ্রমশক্তি থাকার পরেও পেপাল নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা আলোচনা করেও পেপালকে দেশে আনা সম্ভব হয়নি। ফলে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সররা তাদের আয়ের একটি অংশ নিয়ে আসে পে-অনইয়ার অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। আর তাদের পেমেন্ট বাংলাদেশে প্রসেস করে ব্যাংক এশিয়া। ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যাংক এশিয়া ওই বছরে ১৯৪ মিলিয়ন ডলার ছাড় দিয়েছে পে-অনইয়ারের মাধ্যমে আসা অর্থ। তবে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের পরিধি যখন বেড়ে যায়, অনেকজন মিলে যখন কাজগুলো করেন, তাদের একটা বড় অংশই দেশে টাকা নিয়ে আসে না। ফলে সেই আয়ের কোনও হিসাব নেই। এতে রেমিট্যান্স হারাচ্ছে সরকার। বিকাশ ফ্রিল্যান্সারদের এই অভাব দূর করবে।
আরও পড়ুন- যে ৫৫ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করলে পাবেন ৪% প্রণোদনা
ফ্রিল্যান্সররা জানান, তাদের আয়ের বড় একটি অংশ অনলাইন টুলস কিনতে ব্যয় হয়। এসব টুলস বিদেশ থেকে কিনতে হয়। পেমেন্ট করতে হয় ডলারে। বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল একটি ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ একবারে ৩০০ ডলার পেমেন্ট করা যায়। কিন্তু এসব টুলসের সর্বনিম্ন দাম ৪০০ ডলার। যার কারণে ফ্রিল্যান্সররা টাকা দেশে আনেন না। অনলাইনে রেখে দেন। এছাড়া অনেকে আয় আনার ক্ষেত্রে ঝামেলায় জড়াতে চান না। বিদেশে অবস্থানকারীদের কাছে তারা ডলার বিক্রি করে দেশ থেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে নেন। দেশের কিছু ব্যবসায়ী ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে কম মূল্যে ডলার কিনে নেয়। আবার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিস দিতেও অনেকে এটা কিনে নেয়। এসব কারণে রেমিট্যান্স হারাচ্ছে সরকার। যার জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেমেন্ট সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী- বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। ভারতের পরেই অবস্থান। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) মতে, ফ্রিল্যান্সিং থেকে প্রতি বছর ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বাংলাদেশে ঢুকছে। মার্কেট প্লেসে সরাসরি বিড করা ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের ওপরে। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করছে আরও অনেক কর্মী। কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের সঠিক কোনো তথ্য নেই। নিবন্ধন না করায় ফ্রিল্যান্সারদের প্রকৃত সংখ্যা জানা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএফডিএস বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছে।
এদিকে দেশে বসে আয় করার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের উৎসাহ বাড়াতে প্রাথমিকভাবে ৫৫টি বিদেশি স্বীকৃত প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করে দিয়েছে সরকার। এসব অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে আয় করলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাবেন ফ্রিল্যান্সাররা।