১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:২৫

ফেসবুক মুদ্রা কি এবং আমেরিকা কেন তার অনুমোদন দেয়নি

ফেসবুকের নিজস্ব মুদ্রা লিব্রা, যার বর্তমান নাম ডিয়েম  © সংগৃহীত

২০১৯ সালে ফেসবুক তাদের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা লিব্রা যার বর্তমান নাম ডিয়েম, চালু করার ঘোষণা দেয়। এই মুদ্রার মাধ্যমে শুধু মাত্র ফেসবুক একাউন্ট থাকলেই ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া সরাসরি পণ্য বা সেবা ক্রয় বিক্রয় করা যাবে। তাছাড়া প্রয়োজন মাফিক ডিয়েম ভেঙ্গে টাকা, ডলার বা অন্য যেকোনো মুদ্রায় রুপান্তর করা সম্ভব। এই সকল সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসন ডিয়েমের এখনও অনুমোদন দেয়নি।

ডিয়েমের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে এর মজুদ ব্যাবস্থা। এই ব্যবস্থা ফেসবুককে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী এবং ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করতে পারে।একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার যাক; মনে করেন আপনার হাতের কাগুজে মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে সমপরিমাণ স্বর্ণ গচ্ছিত আছে, কিন্তু আপনি কাগুজে মুদ্রা ব্যাবহারে এতই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন যে স্বর্ণ হাতে না রেখে বরং টাকা রাখতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেশে যেই পরিমাণ টাকা আছে তার বিপরীতে সমপরিমাণ স্বর্ণ মজুদ করতে হবে না। ব্যাংক বিনা মজুদে টাকা ছাপতে পারবে।

আরও পড়ুনমুদ্রা ব্যবস্থার কালো দিবসের ৫০ বছর পূর্তি !

ডিয়েমের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে মার্ক জাকারবার্গের হাতেও এই ক্ষমতা চলে আসবে। অর্থাৎ, নিজের টাকা নিজেই ছাপাতে পারবে। অবশ্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে যে তারা এমনটি করবে না এবং মুদ্রার বিপরীতে তরল সম্পদ যেমন বন্ড শতভাগ মজুদ থাকবে। তাসত্বেও এই প্রচেষ্টা আইন প্রণেতাদের বিশ্বাস জোগাতে পারেনি যেহেতু ফেসবুক চাইলেই জেকন সময় তাদের পলিসি পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। ডিয়েমের দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে কোন সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে নতুন মুদ্রা বাজারে আসলে মুদ্রানীতির উপরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা কমে যাবে। বর্তমানে সরকার যেমন মুদ্রার পরিমাণ কমিয়ে বা বৃদ্ধি করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করে, ডিয়েমের ব্যপক ব্যবহার শুরু হলে এই সক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।

সর্বশেষ, ডিজিটাল মুদ্রা দ্বারা কর ফাঁকি দেওয়া, অবৈধ পণ্য ক্রয় বিক্রয় এবং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই মার্কিন প্রশাসন এবং বিশেষজ্ঞরা ডিয়েমকে অনুমোদন দেয়নি। তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে সুইজারল্যান্ড থেকে এই মুদ্রা চালু করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।

লেখক:নরওয়ে স্কুল অফ ইকোনোমিক্স, মানহাইম বিসনেস স্কুল, জার্মানি

mohaiminpatwary@gmail.com