এ বছর জনজীবনে প্রভাব ফেলবে যেসব প্রযুক্তি

  © ফাইল ফটো

২০১৯ সালেও বেশ কিছু প্রযুক্তি আমাদের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।  গত বছর প্রযুক্তির প্রাপ্তির পাশাপাশি এই খাতে বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারিও থাকলেও এ বছর সেগুলো কাটিয়ে উঠবে প্রযুক্তির বাজার।   হয়েছে। বড় বড় সাইবার হামলা, ফেসবুকের তথ্য বেহাতসহ আরো অনেক বিষয় রয়েছে এর মধ্যে।  চলতি বছর মোবাইল ফোন ডিভাইসের দ্রুতগতির ডিসপ্লে, মেকানিক্যাল স্লাইডার, ফাইভ-জি, স্মার্ট ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, আরও উন্নত অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট এবং ফোল্ডেবল স্ক্রিন ও ডিভাইস বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে।   এ বছরের প্রযুক্তির নানা আলোচিত বিষয় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল। 

স্মার্টফোনে ওয়াটারড্রপ নচ

নচ প্রযুক্তির ডিসপ্লে সম্প্রতি একটি আলোচিত বিষয়। এই প্রযুক্তির ডিসপ্লের বেশ চাহিদাও লক্ষ্যণীয়। ২০১৮ সালেই সর্ব প্রথম স্মার্টফোন ডিভাইসে নচ ডিসপ্লের দেখা দেখা যায়, যা ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতেও সক্ষম হয়। এই প্রযুক্তির ডিসপ্লেতে ডিভাইস ডিসপ্লের উপরের অংশের মাঝ বরাবর খুব অল্প জায়গার মধ্যে ক্যামেরা, ইয়ারপিস, প্রোক্সিমিটি ও অ্যামবিয়েন্ট লাইট সেন্সর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর সুবাদে ডিভাইসের আকৃতি না বাড়িয়ে বড় স্ক্রিনের ডিসপ্লে ব্যবহার সম্ভব হয়েছে। তবে চলতি বছর ডিসপ্লের নচ আরো ছোট হয়ে আসবে। ওয়ানপ্লাসের পাশাপাশি অনেকগুলো স্মার্টফোন নির্মাতারা এরই মধ্যে ওয়াটারড্রপ নচ ডিসপ্লের হ্যান্ডসেট বাজারে আনতে শুরু করেছে। চলতি বছরই স্মার্টফোন ডিভাইসে দেখা মিলতে পারে ডুয়াল ডিসপ্লেও।

ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক

বিশ্বব্যাপী ফোরজি প্রযুক্তি চালু হয়েছে। অনেক দেশ ফোরজি প্রযুক্তি যথাযথ হওয়াতে তাদের টুজি ও থ্রিজির সেবা বন্ধও করে দিয়েছে। একই সাথে বিশ্বের অনেক দেশ ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষাও করছে। চলতি বছর দ্রুতগতির এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হবে। ফোরজি নেটওয়ার্কের চেয়ে ফাইভজিতে শতগুণ দ্রুতগতির সেবা মিলবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ফাইভজি প্রযুক্তির যথযথ ব্যবহার শুরু হলে অপটিক্যাল ফাইবার এর প্রয়োজন হবে না। এবছরেই ফাইভজি’র সুবিধা ভোগ করতে পারবে ব্যবহারকারীরা।

ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট

ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এ বছর এটি আরও উন্নত হয়ে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভাইস এখন একটি পরিবারের একাধিক সদস্যের ভয়েস কমান্ড শনাক্তের সক্ষমতা অর্জন করবে। এর ফলে একেকজনের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারবে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট। চলতি বছর স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট স্মার্টফোনের পাশাপাশি সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্য ছড়িয়ে পড়বে। স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মিডিয়া প্লেয়ার, গাড়ি, ডিজিটাল প্রজেক্টর ও অ্যাকশন ক্যামেরার মতো ডিভাইসে ভার্চ্যুয়াল সহকারী ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রযুক্তির দেখা মিলবে।

৯০ ও ১২০ হার্টজ ডিসপ্লে

ডিভাইস ব্যবহারকারীরা অনেকেই দিনভর ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিছু ডিভাইস নির্মাতার ডিসপ্লে অন্যদের চেয়ে উন্নত। সাশ্রয়ী থেকে প্রিমিয়াম সব হ্যান্ডসেটে এখন উচ্চ রেজল্যুশন, উজ্জ্বল ও হাই-এন্ড অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) ডিসপ্লে দেখা যায়। প্রচলিত সব ধরনের ডিসপ্লেরই একটি ঘাটতি রয়ে গেছে, তা হলো রিফ্রেশ রেট। ডিসপ্লের জন্য আদর্শ রিফ্রেশ রেট হলো ৬০ হার্টজ। অর্থাৎ কেউ যখন স্মার্টফোন ডিসপ্লেতে কোনো ছবি দেখেন, তখন এই আদর্শ রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লে প্রতি সেকেন্ডে ৬০ বার ওই ছবিকে রিফ্রেশ করে। রিফ্রেশ রেট বাড়ানো হলে কনটেন্ট দেখার সময় ঝাপসাভাব দূর করবে। বাড়বে ডিসপ্লের গতি। ৯০ কিংবা ১২০ হার্টজের ডিসপ্লে ব্যবহার করলে কেউ আগের স্ট্যান্ডার্ডে ফিরে যেতে চাইবেন না। চলতি বছরই রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লের হ্যান্ডসেট বাজারে মিলবে।

অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি

চলতি বছরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি বাজারে আসবে। স্মার্ট ডিভাইস বিশেষ করে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও ক্যামেরার জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি বাজরে উন্মুক্ত হবে। প্রতিনিয়ত স্মার্ট ডিভাইসে ফিচার সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাই রেজ্যুলেশনের ভিডিও প্রদর্শন, ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তুতি ও উচ্চ-মানের অডিওর জন্য প্রয়োজন হবে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি।

দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি

চলতি বছরে ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি ব্যাটারি দ্রুত চার্জের জন্যও প্রয়োজন হবে দ্রুত চার্জিং পদ্ধতি। গত বছর সব ধরনের মোবাইল ডিভাইসেই শক্তিশালী ব্যাটারির দেখা মিলেছে। তবে লক্ষ্য করা হয়েছে যে, এই ধরনের ব্যাটারিগুলো চার্জিংয়ের সময় বেশ উত্তপ্ত হয়।এই সমস্যার সমাধান ও দ্রুত চার্জিং পদ্ধতি চলতি বছর প্রযুক্তি প্রেমীদের জন্য বিশাল চমক হিসেবে থাকছে। ইতোমধ্যে ওয়ানপ্লাস ড্যাশ চার্জ প্রযুক্তি দারুণ সাড়া ফেলেছে। এ প্রযুক্তিসংবলিত হ্যান্ডসেটের ব্যাটারি মাত্র ৩৫ মিনিটে শতভাগ চার্জ হয়। ফলে, মোবাইল চার্জে রেখে ঘুমাতে গিয়ে দূর্ঘটণার সম্ভাবনা থাকবে না।

ডিজিটাল আসক্তি

ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তির কারণে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ বছর ডিভাইস আসক্তির স্থায়ী সমাধান আসতে পারে। অর্থাৎ ব্যবহারকারী ডিভাইস স্ক্রিনে কত সময় ব্যয় করছেন, তা এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানা যায়। চলতি বছর ডিভাইসেই বিল্টইন ফিচার মিলবে, যা সহনীয় মাত্রার বেশি সময় ডিভাইস ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে। ডিভাইস ব্যবহার করে কোন অ্যাপে কত সময় ব্যয় করা হচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য জানাবে ফিচার।

অগমেন্টেড রিয়েলিটি 

গভীর সমুদ্রে সাঁতার কাটা কিংবা মঙ্গলের বুকে হেঁটে আসা এখন আর কঠিন কিছু নয়। সত্যি সত্যি না হলেও কৃত্রিমভাবে এই অভিজ্ঞতা দিচ্ছে ভিআর। কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার করে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করার এই প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। ত্রিমাত্রিক ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার এই অভিজ্ঞতা সামনে আরও নানা কাজে আসবে। এআর-এর বেলায়ও একই কথা খাটে। বিশেষ করে পোকেমন গো গেমটি যাঁরা খেলেছেন, তাঁরা আরও ভালো জানেন এটা। আর এই দুই প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি হচ্ছে এমআর বা মিক্সড রিয়েলিটি। মাইক্রোসফট এরই মধ্যে এটা নিয়ে কাজ করছে। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর হেডসেট এখন অনেকের হাতেই পৌঁছেছে। চলতি বছর এর স্থান দখলে নিতে পারে আরও উন্নত অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) প্রযুক্তি।

ফোল্ডেবল ডিসপ্লে

ইতোমধ্যে বাজারে আসেছে ফোল্ডেবল ডিসপ্লে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি নির্মাতা কোম্পানি স্যামসাং ও মাইক্রোসফট এর মতো কোম্পানিরা ফোল্ডেবল ডিসপ্লের স্মার্ট ডিভাইস বাজারে উন্মুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি বছরই ফোল্ডেবল ডিসপ্লের ডিভাইস মিলবে, যা স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফোল্ড খুলে ট্যাবলেট ডিভাইস হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

ফেস আইডি প্রযুক্তি

মোবাইল ডিভাইস আনলকের জন্য এখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেস আনলক প্রযুক্তি সর্বত্রই ব্যবহার হচ্ছে, যা পাসওয়ার্ড কিংবা সিকিউরিটি প্যাটার্নের চেয়ে কার্যকর। আইফোন টেন দিয়ে অ্যাপল প্রযুক্তি বিশ্বের সামনে প্রথম ফেস আনলক সিস্টেম উন্মোচন করেছে, যা ফেস আইডি প্রযুক্তি নামেও পরিচিত। চলতি বছর পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি প্যাটার্ন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিকিউরিটি প্রযুক্তি আবেদন হারাবে এবং ফেস আইডি প্রযুক্তি ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার হবে।

ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)

বস্তু, যন্ত্র এবং অন্যান্য উপাদানের মধ্যে বৃহৎ নেটওয়ার্কই হলো আইওটি। এগুলোর মধ্যে সফটওয়্যার, সেন্সর এবং ইলেকট্রনিকসের সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করানোই আইওটির কাজ। নতুন দিনের এই প্রযুক্তি ২০১৯ সালেও বড় প্রভাব ফেলবে। প্রযুক্তিবিদেরা বলছেন, ‘আইওটি আমাদের জীবনে বড় রূপান্তর আনতে যাচ্ছে।’ তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান সিসকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরবর্তী দশকে প্রযুক্তিশিল্পে আইওটির বাজারমূল্য হবে ১৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

রোবট গাড়ি

মানুষ চালকের দিন বোধ হয় শেষ হয়ে এল। ভবিষ্যতের রাস্তায় গাড়ি চলবে নিজের বুদ্ধিতেই। অটোমোবাইলের দুনিয়ায় ইলেকট্রিক্যাল গাড়িগুলোই মূলত এই চমক নিয়ে হাজির হচ্ছে। ইলন মাস্কের টেসলা তো বিস্ময়ে মানুষের মুখ রীতিমতো হাঁ করে দিচ্ছে ইদানীং। মেশিন ল্যাংগুয়েজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উন্নত সেন্সর এবং নতুন ধরনের চালিকাশক্তির সমন্বয় হলো রোবট গাড়ি। ফলে এখন অটোপাইলট দিয়েই দিব্যি পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। ২০১৯ সালে এই প্রযুক্তি আরও জনপ্রিয় হবে।

ব্রায়ান মাইক্রোচিপ

কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইলেকট্রনিকসের সমন্বয়ে কাজ করবে ব্রায়ান মাইক্রোচিপ। এই প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত হবে; কাজ করবে প্রোগ্রামিং সিস্টেম দ্বারা। ফলে অদূরভবিষ্যতে মাইক্রোচিপটি দিয়ে আরও তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে মানব মস্তিষ্কে। মার্কিন প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইনটেলের অনুমান, ২০১৯-২০ সালেই ব্রায়ান মাইক্রোচিপের প্রয়োগ দেখা যাবে। ইতিমধ্যে মানব মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপটি স্থাপন করার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এর ফলে মস্তিষ্কে তথ্য সংরক্ষণ অথবা স্নায়বিক তৎপরতা পরিচালনার মতো কাজও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বিশ্বের অনেক জরিপে বলা হচ্ছে, পৃথিবীর সাম্প্রতিক এই প্রযুক্তি বড় প্রভাব ফেলবে এ বছর। তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস ও বিডিজাটাইউ


সর্বশেষ সংবাদ