মুক্তি পেল বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’

‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’-এর পোস্টার
‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’-এর পোস্টার  © সংগৃহীত

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের সব থেকে বড় ব্যাংক হ্যাকিংয়ের শিকার হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ভুয়া বার্তার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা চুরি করে নেয় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ ঘটনা নিয়ে ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’ নামে এক তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন হলিউড পরিচালক ড্যানিয়েল গর্ডন। ওটিটি প্লাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে তথ্যচিত্রটি মুক্তি পেয়েছে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট)। 

ইউনিভার্সাল পিকচার্স হোম এন্টারটেইনমেন্টের ওয়েবসাইটে তথ্যচিত্র মুক্তির বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে ১৫ আগস্ট তথ্যচিত্রটি মুক্তি পেয়েছে। তথ্যচিত্রটি অভিনয় করেছেন—মিশা গ্লেনি, মিকো হিপ্পোনেন, কৃষ্ণা দাস, রাকেশ আস্তানা এবং রাফাল রহোজিনস্কিসহ আরও অনেকে।

ড্যানিয়েল গর্ডনের পরিচালনায় ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’ শীর্ষক এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের সেই আলোচিত চুরির আদ্যোপান্ত। যে ঘটনা সেই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তো বটেই, পুরো বিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে বড় ঝাঁকুনি দিয়েছিল। তথ্যচিত্রটিতে পরিচালক গর্ডন দেখিয়েছেন কীভাবে একদল সাইবার সিকিউরিটি হ্যাকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি কিবোর্ডে সামান্য লেখার ত্রুটিতে (টাইপো) কীভাবে আরও বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের, সেটি এই তথ্যচিত্রে রয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও লেখক মিশা গ্লেনির এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধের বৃহত্তর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে। এছাড়া তুলে ধরা হয়েছে সামাজিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে কীভাবে সময়ের সঙ্গে বিবর্তন ঘটেছে সাইবার অপরাধের। কীভাবে বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাইবার নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।

‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’-এ দেখানো হয়েছে, কীভাবে হ্যাকাররা সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) ব্যবস্থা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল। সুইফট হলো সারা বিশ্বের ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি মেসেজিং নেটওয়ার্ক। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একে অপরের মধ্যে অর্থ স্থানান্তর করে।

সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করেই হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার সরায়। শেষ পর্যন্ত ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় তারা। বাকি টাকা তাদের সামান্য ভুলের কারণে আটকে যায় শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এ ঘটনায় ম্যানিলাভিত্তিক আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ৮১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা হয়েছিল ৷ সেখান থেকে ফিলিপাইনের ক্যাসিনোগুলোতে সেগুলো ব্যয় করা হয়।

চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত আরসিবিসি থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে পাঠানো আরও ২০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করেছে ৷ আরও ৬৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


সর্বশেষ সংবাদ