ফেসবুকে ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন পেইজ: বিনোদন নাকি বিড়ম্বনা!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন পেইজ। বর্তমানে বেশিরভাগ পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে এমন একটি করে পেইজ বা গ্রুপ। এসব পেইজের ফ্যান ফলোওয়ারের সংখ্যাও অনেক। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ঢাবি, জাবি, রাবি, চবিসহ প্রায় শতাধিক ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন পেইজ ফেসবুকে রয়েছে। যার মধ্যে অনেক কলেজ এবং স্কুল পর্যায়ের পেইজও রয়েছে।
নিজ ক্যাম্পাসে প্রথম দেখায় কাউকে ভালো লেগে যাওয়া বা ক্রাশ খাওয়ার পর অনেকেই তা ভয়ে বা সংকোচের কারণে ভাল লাগার মানুষটির কাছে প্রকাশ করতে পারে না। ভাল লাগা প্রকাশ করার কঠিন এই কাজটিকে সহজ করে দিয়েছে ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন পেইজগুলো। কেননা এখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখে মনের কথাগুলো অকপটে বলে দেওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা এই পেইজগুলোকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। বন্ধু-বান্ধবীদের নামে পোস্ট হওয়ার পর কমেন্টে খুনসুটি, হাসাহাসিতে মেতে উঠেন তার সহপাঠীরা।
একটি কনফেশন পেইজের একটি পোষ্ট ছিল এমন,
Confession:...............
প্রাপক: ....................,বিভাগ:.........শিক্ষাবর্ষ:..........।
প্রেরক: .................. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
প্রিয়সিনী,
আমার শুভেচ্ছা নিও।
তোমার প্রথম দর্শন লাভ করেছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে, ক্যাম্পাসে বেড়াতে এসেছিলে বোধহয়। দর্শনে তোমায় নিভৃতে তুমি হৃদয় হরণ করেছ আমার। সে অবধি আর কিছুই রসবোধ্য হচ্ছে না। বিধাতার নরকীটের শেষ প্রাণবিন্দু যেমন প্রকারে স্বর্গপ্রাচীরের ওপারে সামান্য স্থান পায় তেমনি প্রকারে তোমার মনোরাজ্য আশ্রয়প্রার্থী আমি। পারতপক্ষে তার যৎসামান্য ক্ষুদ্র স্থান পেতে ইচ্ছুক। জানি না পাবো কি না তোমার সম্মুখ দর্শন। দর্শনে তোমার সনে স্বর্গ সুধা পানের ন্যায় এক পেয়ালা কফি সেবন করিবার ইচ্ছে পেষণ করি। হৃদয় গহীনের ক্ষরোত্তপ্ত ভূমিতে তোমার অম্লীয় শ্রাবণে প্রসমিত হতে পাবো কি না তাও অজানা। তবু তোমার পাণিপ্রার্থী হয়ে থাকতে চাই।
ইতি
তোমার মায়াবী চেহারাই মুগ্ধ কেউ।
আরও পড়ুন: ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর নয়, সাজগোজের দিন আজ
এমন পোষ্টগুলোতে মজার ছলে কমেন্ট করলেও নেতিবাচক কমেন্টও থাকে। সব সময় শুধু বিনোদন হিসেবে থাকে না পোস্টগুলো। এর রয়েছে কিছু নেতিবাচক দিকও। অনেক মেয়েই অভিযোগ করেন, তাদের অনুমতি ছাড়া নাম বা ছবি এসব পাবলিক প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা হয়, যা পরবর্তীতে তাদের সামাজিক, পারিবারিক জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন এক ছাত্রী তামান্না তাহমিদ (ছদ্মনাম) এমন একটি বিব্রতকর অবস্থার স্বীকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র ভাই তার ছবি এবং নাম ব্যবহার করে কনফেশন পোস্ট দেন। বন্ধু মহল থেকে তা ছড়িয়ে যায় তার পরিবার পর্যন্ত। মেয়েটির ধর্মভীরু বাবা এসব বিষয় নিয়ে তিরস্কার করতে থাকেন এবং তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত তার পড়াশোনা বন্ধ না হলেও পারিবারিক এবং সামাজিক হেনস্তার কোনো প্রতিকার তিনি আজও পাননি। সাধারণত এসব পেইজের এডমিন কারা তা জানতে না পারায় প্রতিকার পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠে। তাই অনেকেই মানুষের প্রাইভেসি নষ্ট করা এসব পেইজ বন্ধ করার দাবি জানান।
নিছক বিনোদনের জন্য পোস্ট দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা দুই পক্ষের মারামারি পর্যায়ে পোঁছে যায়। কিছু কিছু পোস্ট আইনি পর্যায়েও গড়ায়। পেইজের এডমিনদেরও মাঝে মাঝে নানা ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। তবে এসবের পরোয়া না করে পেইজ চালিয়ে যান তবুও। জায়েদ খান (ছদ্মনাম) নামে এক এডমিন জানান, অনেক সময়ই আমরা পেইজের ইনবক্সে বিভিন্ন পোস্ট নিয়ে গালিগালাজ বা মামলা হামলার হুমকি পাই। অনেকেই তাদের সমস্যার কথা শেয়ার করেন। সেক্ষেত্রে আমরা অনেকের পোস্ট আনপাবলিশ করে দেই। তবে আমরা পজিটিভ রেসপন্সই বেশি পাই। মানুষকে বিনোদন দিতে পেরে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
অনেক সময় নিজ বন্ধু-বান্ধবরা নিজেরদের বন্ধু বা বান্ধবীর নামে ফেইক কনফেশন পোস্ট করেন। যা বেশির ভাগ ঘটে থাকে ছেলেদের সাথে। অনেকেই পরবর্তীতে নানা ধরনের বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন।
এত নেতিবাচকতার ভিতর ইতিবাচক দিক হলো কোনো কোনো পোস্ট থেকে পরবর্তীতে ভালোলাগার মানুষটির সাথে ভালোবাসার সম্পর্কও গড়ে উঠে। ছোট একটি পোস্ট থেকে কেউ কেউ সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে উঠেন। তাই অনেকের চাওয়া এসব পেইজ একবারে বন্ধ না করে মানুষের ব্যক্তিগত ছবি বা নাম ব্যবহার ছাড়াই বিকল্প উপায়ে যেন পোস্টগুলো করা হয়। এতে বিনোদন এবং প্রাইভেসি উভয়ই ঠিক থাকবে বলে মনে করেন তারা।