মাউশির নির্দেশনা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর  © ফাইল ফটো

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে মাউশির সতর্কতায় বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও সুশীল নাগরিকরা। তারা মনে করেন এটা সরকারের নির্দেশ নাও হতে পারে। সরকারকে খুশি করতে শিক্ষা প্রশাসনের কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এই নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফরুক জানান, ‘‘এই নির্দেশনা শিক্ষক ও কর্মচারিদের জন্য, ছাত্রদের জন্য নয়। সংবাদমাধ্যমে ভুল খবর এসেছে। যারা সরকারি কর্মচারী তাদের জন্য। ছাত্ররা তো আর সরকাারি কর্মচারি নয়।”

তবে মাউশির নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা নির্দেশনার সঙ্গেই মিল পাওয়া যাচ্ছে না মহামপরিচালকের কথার। আদেশে শিক্ষার্থীদের কথাও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এই আদেশকে যথার্থ নয় বলে অনেকে মনে করলেও মাউশির অধীন থাকা কোনো স্কুল-কলেজের শিক্ষক এ নিয়ে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পড়ুন: সরকারবিরোধী পোস্ট লাইক-শেয়ার দিতে মানা কলেজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও ফেসুবক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা থেকে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে মাউশির নির্দেশনায়।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, পোস্ট অনুমোদন করার সময় সরকারি নীতিমালা পরিপন্থি, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান, দপ্তর ও সংস্থার বিপক্ষে অবস্থানকারী কোনো পোস্ট অনুমোদন করবেন না। অন্যথায় পোস্টদাতা ও অ্যাডমিন উভয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘‘ভাবমূর্তির সংজ্ঞা কী তা তো স্পষ্ট নয়। সরকারের কোনো কাজের সমালোচনা করা মানে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা নয়। সরকারের সমালোচনা করতে দেয়া উচিত। এতে সরকার বুঝতে পারবে প্রকৃত অবস্থা কী। সমালোচনা বন্ধ করতে চিঠি দেয়া কোনো ভালো কাজ নয়।”

ভিন্ন মতের চর্চা ও সুযোগ থাকতে হবে। আর কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা বলার সুযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

ড. কায়কোবাদের মতে, এই ধরনের নির্দেশনা শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করবে। তারা কথা বলতে ভয় পাবে। কারণ সরকার কোনটাকে খারাপ হিসবে নেবে তারা তো তা জানে না।

তবে এটাকে অতি উৎসাহীদের কাজ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার। তার মতে, এটা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘যেটা বাস্তবতা, যেটা অনিবার্য সেটাকে তো বাদ দেয়া যায়না। এটা কাউন্টার প্রোডাকটিভ, এটা ব্যাক ফায়ার করতে বাধ্য। এটা কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নয়। এটা অস্বস্তি সৃষ্টি করবে।”

তবে ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লা মনে করেন, ‘‘মাউশির এই নির্দেশনা যথার্থ। কারণ অনেকেই ফেসবুকে নানা ধরনের কুৎসা রটায়। দায়িত্বজ্ঞানহীন পোস্ট দেয়। এটা বন্ধ করা প্রয়োজন। যারা রাজনীতি করেন তারা সমালোচনা করবেন। শিক্ষক-ছাত্রদের এটার দরকার নেই। তবে ছাত্ররা যারা রাজনীতি করে তাদের কথা আলাদা।”

মাউশির মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আমরা নতুন কোনো নির্দেশনা দেইনি। এটা মন্ত্রিপরিষদেরই নির্দেশনা সরকারি কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের জন্য। আমরা সেটা নতুন করে জানিয়ে দিয়েছি।''

‘ভাবমূর্তির’ ব্যাখ্যা কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেটা আমরা দেখব কোনটা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে, কোনটা করে না। যারা পোস্ট দেন তারও খেয়াল রাখবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এটা যেমন খেয়াল করবেন, আমরাও নজর রাখবো।’’ [সূত্র: ডয়চে ভেলের বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ