ঢামেক শিক্ষার্থীদের ব্যাচের নামে ‘কে’ অক্ষর ব্যবহার হয় কেন?
- এম টি রহমান
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২০, ০৮:৫৯ AM , আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০, ০৯:৫২ AM
কয়েক দশক ধরে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ)। সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা স্বল্প খরচে দিয়ে আসছে হাসপাতালটি। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ডিএমসি) তৈরি হচ্ছেন দেশের সেরা চিকিৎসকরা। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ৭৫ বছরে পা রেখেছে চিকিৎসা ও এ সংক্রান্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশসেরা প্রতিষ্ঠানটি।
আজ ১০ জুলাই। দেশের প্রাচীনতম মেডিকেল কলেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৩৬ সালের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৬ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হিসেবে চলছে কলেজটির কার্যক্রম।
দেশের পুরোনো আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজেরও রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কলেজের শিক্ষার্থীরা বড় ভূমিকা রেখেছেন। অনেকের প্রাণও গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অনেক বিষয়েই দারুন কিছু তথ্য পাওয়া। তার মধ্যে কলেজটির শিক্ষার্থীদের ব্যাচের নামকরণ অন্যতম। দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাচের নামকরণ করা হয় সাধারণত কলেজের ইংরেজি সংক্ষিপ্ত রুপ দিয়ে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই প্রতিটি ব্যাচের আগে ব্যবহার করা হয় ইংরেজি ‘কে’ অক্ষরটি।
এ কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেল কয়েকটি মজার তথ্য। তবে ‘কে’ অক্ষরটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি কারণ জানা গেলেও নির্দিষ্ট কারণটি জানা সম্ভব হয়নি। এর ব্যবহারের পেছনে একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে, যার কোনটিই সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত নয়।
কলেজের ৬৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘এই নামকরণে একাধিক মত আছে। প্রথমত এটি উপমহাদেশের ১১তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সে কারণে ইংরেজি ১১তম অক্ষর ‘কে’ ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠার সময় প্রথম চার ব্যাচের শিক্ষার্থী কলকাতার ছিল। সে কারণে কে-১, কে-২ এভাবে ব্যাচগুলোর নামকরণ করা হয়। কে-৫ ব্যাচে গিয়ে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন।’
একই ধরনের কথা বলেন ঢামেকের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হুসাইন। তিনি বলেন, ‘ব্যাচের আগে কে অক্ষরের ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে ইংরেজি ১১তম অক্ষর ‘কে’ দিয়ে নামকরণের কথা শোনা যায়। এছাড়া কলেজের প্রথম চার ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছিলেন কলকাতার। সে কারণেও এই অক্ষরটি ব্যবহারের কথা শোনা যায়।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্যাচের নামে ‘কে’ অক্ষরটির ব্যবহার নিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়াতেও একটি বিবরণ রয়েছে। সে মোতাবেক, ১৯৪৬ সালে কলেজের সকল বর্ষেই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে ১ম বর্ষের নামকরণ করা হয় কে-৫, একই ভাবে ২য় বর্ষের কে-৪, ৩য় বর্ষকে কে-৩, ৪র্থ বর্ষকে কে-২ এবং ৫ম বর্ষকে কে-১ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
১ম বর্ষ ব্যতীত অন্য সকল বর্ষে ছাত্ররা কলকাতা মেডিকেল কলেজ হতে মাইগ্রেশন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসেন। এর পিছনে অন্যতম বড় কারণ ছিল ৪৭-এর দেশ বিভাগ। বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেকই ছাত্রী হলেও শুরুর দিনগুলোতে কোন ছাত্রী ছিল না। ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রতিটি ব্যাচের নামেই রয়েছে ‘কে’। এই ‘কে’ যে কোন ‘কে’ তার কিন্তু সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায়নি।
ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। কারও মতে ‘কে’ ইংরেজি বর্ণমালার একাদশ বর্ণ নির্দেশ করে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের একাদশ মেডিকেল কলেজকে। আবার কারও মতে ‘কে’ Kalcutta (যদিও Calcutta লিখা হত আর বর্তমানে Kolkata লিখা হয়)-এর আদ্যাক্ষর থেকে। কারণ প্রথম দিককার অনেক ছাত্রই কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে মাইগ্রেশন করে এসেছিল।