ছাত্র-জনতার সংহতির অপেক্ষায় নাসির
- তাওসিফুল ইসলাম, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৪:২৫ PM , আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৪:২৫ PM
টানা ১৬ দিন আকাশের নিচে নাসির আব্দুল্লাহর অবস্থান। প্রচন্ড শীত, আবার কখনো কখনো ঠান্ডা বাতাসের ধমকা হাওয়া। তারপরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক দাবি নিয়ে বসে আছেন তিনি।
সে দাবি হলো- সীমান্ত হত্যার দ্রুত বিচার এবং স্থায়ী সমাধান। পাশাপাশি বাংলাদেশের ছাত্রজনতা সহ সকল স্তরের মানুষকে তার এই অবস্থান কর্মসূচীর প্রতি সংহতি জানানোর আহ্বান জানান।
নাসির আব্দুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এমবিএর শিক্ষার্থী। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র। উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে সীমান্তে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন ওই শিক্ষার্থী।
নাসির আব্দুল্লাহ মনে করছেন স্বাধীন–সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার কিংবা অন্যান্য সক্রিয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। কেউ কেউ ক্ষীণস্বরে প্রতিবাদ করলেও সরকারের মন্ত্রী এবং সরকারদলীয় নেতারা খোলাখুলি এ হত্যার পক্ষে যুক্তি যোগাড় করছেন এবং জনগণকে তা গিলানোর চেষ্টা করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে ১ বছরে ৪০ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছে এবং আরও ৩৪ জন অপহৃত হয়েছেন। আসক এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ৪৬ জনের মধ্যে ছয় জনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এবং প্রাণহানির এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
কিন্তু এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে সীমান্তে এমন প্রাণহানির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ জন। সে হিসেবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রাণহানির সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।
২০২০ সালের প্রথম মাসেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ১২জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে।
এ নিয়ে নাসির আব্দুল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নির্বিচারে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বিনা প্রতিবাদ-প্রতিরোধে অব্যাহতভাবে চলছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় তিনগুণ বেড়ে গেছে সীমান্ত হত্যা। অথচ স্বাধীন–সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার কিংবা অন্যান্য সক্রিয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই বলেই মনে হচ্ছে।
সীমান্তে লাশের পর লাশের সারি যখন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে আর স্বামী-পুত্রের গুলিবিদ্ধ লাশ হাতে বিধবা আর সন্তানহারা মা যখন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি তখন বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আর ভারতের মদদপুষ্ট সরকারের নির্লজ্জ দালালিই কি আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যত? না, আমি এ বর্তমানকে ঘৃণা করি আর এ ভবিষ্যতের পথে বাগড়া দিতে চাই। না, আমি এ হত্যার প্রতিবাদ করতে চাই। সোজা কথায় আমি চাই সকল সীমান্ত হত্যার বিচার হোক। সীমান্তে হত্যা বন্ধ হোক। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এ প্রতিবাদে শামিল হতে আহবান জানান।
তিনি বলেন, আমার অবস্থান আর দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে আরো শক্তিশালীভাবে প্রতিবাদে শামিল হোন। এ হত্যার মিছিল আমাদের রুখতেই হবে। সম্প্রসারণবাদী ভারতের বন্দুকের নলকে আমাদের থামাতেই হবে। আমাদের জনগণের মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে একটা স্বাধীন দেশ পেলেও আমাদের মুক্তি তো আসেইনি বরং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও কেড়ে নেয়া হয়েছে। জনগণকে আবার এ রাষ্ট্রের মালিকানা দাবি করতে হবে। পিন্ডিকে আমরা যেমন রুখে দিয়েছি তেমন দিল্লিকেও রুখে দিতে হবে। আমার অবস্থান জনগণের কাছে এ রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অবস্থান। ভারতের গোলামি থেকে এ দেশকে মুক্ত করার জন্য আমার অবস্থান।
তিনি আরো বলেন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব আর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মোকাবেলায় আমি নিজের কাছে নিজেকে স্পষ্ট রাখতে চাচ্ছি। আমি জানি, আমার এ অবস্থান ধীরে ধীরে ভয়ের সংস্কৃতির কারবারিদের ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। আমি জানি, আমার এ অবস্থান আবেগ আর যুক্তির দ্বিধার বাইরে বাংলাদেশের মজলুম জনগণের সাথে আত্মীয়তা গড়ার প্রয়াস। আমি আমার এ অবস্থান চালিয়ে যাব এবং ছাত্র-জনতার সংহতির অপেক্ষায় থাকবো। আমি জানি, ছাত্র-জনতা বসে থাকবেনা। কারণ, সীমান্তে এবং সীমান্তের ভেতরের সকল বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য ভারত ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দালালেরাই দায়ী। স্বৈরাচারী কাঠামোতে যখন রাষ্ট্র-সরকার-প্রশাসন মিলেমিশে একাকার তখন আমাদের এই দৈত্যের শত-শস্ত্রের বিরূদ্ধে যূথবদ্ধ হতে হবে এবং পুরো স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারি রাখতে হবে। আর আপনারা সবাই জানেন, এ স্বৈরাচারী ব্যবস্থা টিকে আছে ভারতের নগ্ন দালালীর উপর। আপনারা সবাই নিজেদের জায়গা থেকে আমার দাবির পক্ষে সংহতি জানান। নিজেদের বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে স্ব স্ব জায়গায় সংহতি কর্মকান্ড সূচনা করুন। সামাজিক মাধ্যমে – ফেসবুকে, ইউটিউবে এবং অবশ্যই টুইটারে সীমান্ত হত্যার বিরূদ্ধে কথা বলা শুরু করুন। সীমান্ত হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে গণমত গড়ার লক্ষ্যে নিজেদের জায়গা থেকে সোচ্চার হোন। রাজু ভাস্কর্যে নিয়মিত যেসব আড্ডা –অনুষ্ঠান সংঘটিত হয় সেগুলোতে অংশ নিন।