ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের মারধরের অধিকার ছাত্রলীগের নেই: ভিপি নুর
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৪২ PM , আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০১:০৫ PM
শিবির সন্দেহে বা ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের মারধরের অধিকার ছাত্রলীগের নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুর বলেন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে সন্দেহজনকভাবে মারধরের ঘটনায় মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে একথা বলেন।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘ছাত্রলীগ যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের শিবির সন্দেহে মারার। ছাত্রলীগকে এই অধিকার কে দিয়েছে? তাদের কোন অধিকার নেই। দেশটি আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নয়।’
তিনি বলেন, ‘ভিপির উপর হামলা করে বলে জামাত-শিবির। এখন তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করার জন্য আমরাও আহবান জানাবো। নিরব থাকলে চলবেনা।’
নিরব থাকলে ছাত্রলীগের হাতে মার খেতেই থাকবে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের উপরে নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।’
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যোলয়ে (ঢাবি) শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের পরে পুলিশ হেফাজতে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে জুহুরুল হক হলের গেস্টরুম শেষে এ ঘটনা ঘটে।
এর প্রতিবাদে আজ বিকেল ৪টায় শাহবাগে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। এছাড়া বিকেল ৩টায় সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়।
সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিক চাপ দেয়। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।
পরে তার ফোনের চ্যাটলিস্ট দেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধর সহ্য করতে না পেরে তারা উভয়েই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়ে।
এর কিছুক্ষণ পরে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত ২টা পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতারা। পরে তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেন, তাদের নিকট থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তার কোন নাম অথবা প্রমাণ দিতে পারেননি তারা।
শিবির সন্দেহে তাদেরকে গেস্টরুমে ডাকা হলেও তাদের কাছে শিবিরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ বের করতে পারেনি ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজাকে ফোন দিলে তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গতরাতে তাদের আমরা ধরে আনি। তারপর তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাতেই আবার থানায় আনা হয়। বর্তমানে তারা থানায় আছে।’
এ বিষয়ে জহুরুল হক হলের হল প্রভোস্ট দেলোয়ার হোসেনকে ফোন দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। এছাড়া ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তাদেরকে কেউ নির্যাতন করেনি। হল প্রশাসন এবং প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় তাদেরকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে কিছু না পেলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ বিস্তারিতভাবে জানতে হল প্রশাসনের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।
এদিকে, আমির হামজা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে এক ফার্মেসি দোকানদারকে মারার অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের নাম দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
সাত কলেজবিরোধী আন্দোলনে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে তার গ্রুপের ছেলেদের দিয়ে মল চত্ত্বরে মারধর করানোর সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।