সমাবর্তনের আনন্দ ঢাকা পড়েছে চাকরির দুশ্চিন্তায়
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:৫৭ PM , আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:২৭ PM
শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার উচ্ছ্বাস থাকলেও লুকোতে পারছিলেন না দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ। তাদের এই দুশ্চিন্তা চাকরি নিয়ে। জীবিকা নির্বাহের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। পড়াশোনার পাঠ চুকে আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি নিয়ে তারা যেন পড়েছেন মহাবিপদে। এ যেন সাঁতার না জেনে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার মতো অবস্থা।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাবির অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনের অংশ নেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের মাঝে বিরাজ করছে এই উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা। সমাবর্তনে ডিগ্রি নিতে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের এই হতাশার কথা বলেছেন অকপটে। সেই সাথে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন দেশের বেকার সমস্যা দূর করার জন্য।
ঢাকা কলেজ থেকে সমাবর্তনে অংশ নেয়া গ্র্যাজুয়েট সাইদুর রহমান শফিক সাথে কলেজ মাঠে ছবি তুলতে তুলতে কথা বলছিলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে বাবা-মা পড়ালেখা করতে ঢাকায় পাঠিয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলাম কিন্তু এখন চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ভর করেছে।
এদিকে পড়াশোনা শেষ করার আগে থেকে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন শফিক। কিন্তু চাকরির বাজারের অবস্থা দেখে বার বার হতাশ হয়ে পড়ছেন। শফিক বলেন, যখন দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম তখন থেকেই চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্ত চাকরির প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। আর তাছাড়া দেশের বাজারে পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগও নেই।
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। অর্থাৎ আমরা এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টে বাস করছি। অথচ দেশের একটা বড় অংশ এখনো বেকার। তারা এত বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েও এখনো চাকরি পায়নি। আমরা কীভাবে পাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সায়েম মাহমুদ জানান, পারিবারিক টানাপোড়েনের মাঝে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলাম। এসবের মাঝে কাঙ্ক্ষিত অনার্স সম্মান শেষ করে ফেলেছি। কিন্তু পারিবারিক অভাব-অনটন এখনো পিছু ছাড়ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের আজকের এ দিনে এসেও ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।
তথ্য মতে, সমাবর্তনে ২০ হাজার ৭৯৬ জন গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৭৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অধিভুক্ত সাত কলেজের ১০ হাজার ৪৪ জন। এবারের সমাবর্তনে ৭৯ জন কৃতি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ছয়জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি আচার্য মো. আবদুল হামিদ। বক্তা ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা। অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সাইন্স’ ডিগ্রি দেওয়া হয়।
সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।