ঢাবিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ, ক্যাম্পাস বন্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ভিড়
ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ভিড়  © টিডিসি ফটো

সারা দেশে ডেঙ্গুর ছড়িয়ে পড়লেও রাজধানী ঢাকায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাদ যায়নি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। ইতিমধ্যে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ক্যাম্পাস বন্ধ করার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি হলেই ডেঙ্গুর রোগী রয়েছেন। এই নিরব ঘাতক ডেঙ্গু ভয়াবহ হানা দিয়েছে আবাসিক হলগুলোতে। ক্রমশই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সবমিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ স্যাতসেতে ময়লা পরিবেশ, নতুন ভবন নির্মাণের কারনে মশা বৃদ্ধি, যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ প্রভূতি। এছাড়া প্রশাসনের উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলাকেও দায়ী করেছেন অনেকে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন যদি বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখত, ময়লা ও স্যাতসেতে পরিবেশ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখত, তাহলে মশার উপদ্রব হয়ত কম হত। কিন্তু প্রশাসনকে এই বিষয়গুলো বার বার অবহিত করার পরেও টনক না নড়ার কারণে  ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন গণরুমের শিক্ষার্থীরা। গণরুমে চার জনের রুমে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী বসবাস করে। স্বাভাবিকভাবেই ময়লা-আবর্জনা জমা হয় এই রুমগুলোতে। ফলে রুমেই বংশ বিস্তার করে মশা। এছাড়া হলের অন্য রুমের শিক্ষার্থীরাও অসুস্থ হচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের মাঝে। হলে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অভিভাবক তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু ক্লাস থাকার কারণে যেতে পারছেন না।

এদিকে। ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে শুরু করে সচেতন মহল। ডেঙ্গু থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের জোর দাবি তাদের। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি মশা নিধনের পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র উমর ফারুক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি খুবই আতংকে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলার কারনে বাড়িতে যেতে পারছি না। বাড়ি থেকে মা ও ভাই চাপ দিচ্ছে বাড়িতে যেতে। তারা বলেছে, আগে জীবন,পরে পড়াশোনা। না বাঁচলে কীসের পড়াশোনা। কিন্তু আমি কি করে তাদের বুঝায় যে, ক্লাস না করলে আমার এক বছর গ্যাপ যাবে।’

একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানকে সবচেয়ে ভালবাসি। এই মহামারিতে সন্তানদের দূরে রাখতে চাই না। প্রশাসনের কাছে দাবি, অতি দ্রুত যেন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দিয়ে সন্তানকে আমার কাছে আসতে দেওয়া হয়।’

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রতিটা হলের প্রশাসনকে ডেঙ্গু নিধনে ওষুধ ছিটানোর ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে স্যাতসেতে ও পানি জমে আছে, ওইসব এলাকায় ওষুধ ছিটানোর ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি।’

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সবাই যেন স্বাস্থ্য সচেতন থাকে। মশার বিষয়ে যেন সবাই নিরাপদ থাকে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে যেন সুস্থ রাখে।’


সর্বশেষ সংবাদ