ঈদের আগেই কৃষকের ন্যায্য মূল্য ও শ্রমিকের মজুরি দিন: ভিপি নুর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ মে ২০১৯, ০১:০০ PM , আপডেট: ১৫ মে ২০১৯, ০১:৪৭ PM
কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার জন্য দ্রুত কমিটি করার আহবান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার কৃষকদের পরিবর্তে বড় বড় চোরদের রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছে। এসময় কৃষকদের রক্ষায় ছাত্র সমাজ সোচ্চার হবে বলেও তিনি জানান।
বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ধানসহ সকল কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, কৃষিখাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান এবং এব মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে নিয়ে আসার দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সেখানে দেশব্যাপী এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজনের পাশাপাশি দেশের সকল কমিটি পৃথকভাবে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিন করেছে।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘যাদের উৎপাদিন পণ্য খেয়ে বেঁচে আছি তাদেরকে সঠিক মূল্য আমরা দিতে পারছি না। মন্ত্রীরা বক্তব্য দিচ্ছেন ধান বেশি হওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে। অথচ চালের দাম ঠিকই বেশি। এটি কারণ নয়, সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমে যাচ্ছে। চালকল মালিকরা পরিকল্পিতভাবে মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। সরকারের এক্ষেত্রে কোন নজরদারি নেই।’
তিনি বলেন, ‘যে সরকার যখনই ক্ষমতায় থাকে এদের অধিকার রক্ষায় সরকার ব্যস্ত থাকে। কৃষকদের রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয় না। নিলে ছাত্রসমাজকে এভাবে মাঠে নামতে হত না।’
নুরুল হক নুর আরো বলেন, ‘খুলনায় পাটকল শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেখানে সরকার বাঁধা দিয়েছে। কোন শ্রমিক সংগঠন বা সরকার তাদের পাশে দাড়ায়নি। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের পালস বোঝে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষকসহ সকল শ্রমিক, মেহনতি মানুষের পাশে আছি। প্রয়োজনে তাদের অধিকার রক্ষায় পাশে থাকবো। এজন্য প্রয়োজনে লংমার্চ করা হবে। আগেই এ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এসব সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়ে ডাকসু ভিপি বলেন, ‘ঈদের আগেই পাটকল ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে হবে। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। ছাত্র সমাজকে দাবায়ে রাখতে পারবেন না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ছাত্রসমাজ মাঠে নামবে।’ এদেরকে না বুঝলে সরকার ইতিহাসের আস্তাকূড়ে নিক্ষিপ্ত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘আমি ছাত্র, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। একমণ ধানের দাম ৪৫০-৫০০ টাকা। এই ধান থেকে চাল হয় ১২০০ টাকার। ৭০০ টাকা তারা খেয়ে ফেলছে। সিন্ডিকেট এই টাকা মেরে দিচ্ছে। অথচ বীজ উৎপাদন থেকে শুরু করে ধান উৎপাদন পর্যন্ত কৃষকদের কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয় তা আমরা জানি। এর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার দায় রাষ্ট্রের।’ এসময় কৃষকদের মহাসমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মানববন্ধনে নিজেদের দাবি জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘সরকারের নিকট আমাদের কিছু দাবি রয়েছে। খরচ অনুযায়ী কৃষকের ধানের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরাসরি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে কমমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। হয়রানি এবং ঝামেলা মুক্তভাবে কৃষিঋণ দিতে হবে।’
এসময় সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, ‘সারাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান থাকবে, তারা যেন কৃষকদের পাশে থাকে। আমরা দেখতে পাচ্ছি কৃষকরা ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছে না বলে স্কাউটের সদস্যরা কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও যেন স্কাউটের সদস্যদের মত এভাবে এগিয়ে আসে, তাদের কাছে সেই অনুরোধ থাকবে।’
অপর যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হাসান বলেন, ‘দেশের নানাক্ষেত্রে কৃষকের অবদান রয়েছে। তাদের টাকায় আমাদের পড়াশুনা করতে হয়। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। কৃষকরা কষ্টের ফসলে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আগুন দিচ্ছে।’ এসময় ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমে তাদের পক্ষে থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।