১৯ জুন ২০২২, ০৯:১২

প্রশ্ন ফাঁস করে আয় করেছেন ২৫ কোটি টাকা

প্রশ্নপত্র ফাসঁ  © প্রতীকী ছবি

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা আয় করার অভিযোগ উঠেছে জনতা ও রূপালী ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে। ৭ জুন (মঙ্গলবার) বাড্ডা থানায় তাদরে বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মামলা করেছে সিআইডি।

অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন জনতা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শামসুল হক (শ্যামল) ও রূপালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানে আলম। সিআইডি জানায়, তাদের বিরুদ্ধে অন্তত ২৫০–৩০০ পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রির তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে তারা।

মামলার অনুসন্ধান কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ মামলার এই আসামিরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিলেন। অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবসহ অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এখন পর্যন্ত ২৫ কোটি টাকার অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য জানা গেছে।

মেহেদী হাসান বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা জানে আলম ও শামসুল হক, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির টেকনিশিয়ান মো. মোক্তারুজ্জামান, ল্যাব সহকারী মো. পারভেজ মিয়া, অফিস সহকারী মো. দেলোয়ার হোসাইনসহ ১৫ জন তিন বছর ধরে (২০১৮–২০২১) প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। এ সময়ে ২৫ কোটি টাকা আয় করেছেন তারা।

আরও পড়ুন: চরে আটকা পড়েছে লঞ্চের শতাধিক যাত্রী— সবাই শিক্ষার্থী, উদ্ধারের আকুতি।

তিনি আরও জানান, অপরাধলব্ধ আয়ের টাকা আসামিরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন, কেউ কিনেছেন জমি।

মামলার বাদী মেহেদী হাসান বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অবৈধভাবে উপার্জিত আয়ের উৎস লুকাতে নামে-বেনামে সম্পত্তি করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অন্য আসামিরা। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের জমি কেনার তথ্য মিলেছে। কেউ কেউ বেনামে সম্পত্তি কিনেছেন। আসামিদের ব্যাংক হিসাব লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে আরও বিস্তারিত তথ্য আদালতে জমা দেওয়া হবে।

এ ঘটনায় পৃথক মামলা করেছে ডিবি পুলিশ। ডিবির মামলাসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য হলেন রূপালী ব্যাংকের জানে আলম, আহছানউল্লাহর দেলোয়ার, পারভেজ ও মোক্তারুজ্জামান। দেলোয়ার ছিলেন আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন (অফিস সহকারী)। ব্যাংকসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপার দায়িত্ব পায় এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশ্নপত্র ছাপা হতো আহছানিয়া মিশনের নিজস্ব ছাপাখানায়। সেখানে নজরদারি ও নিরাপত্তার অভাব ছিল। এ সুযোগে দেলোয়ার লুকিয়ে সেখান থেকে প্রশ্ন নিয়ে আসতেন। তিনি অন্তত চার–পাঁচটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এনেছিলেন। আর পরীক্ষার আগে রূপালী ব্যাংকের শামসুল হক প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর তা সমাধান করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন।

এ ঘটনায় ডিবির দায়ের করা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক শেখ লিয়াকত আলী বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুল, জানে আলমসহ অন্যরা ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেছেন। আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা মুঠোফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে

ঢাকার আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে , পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মামলায় এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডিবি পুলিশ।

তবে ব্যাংক কর্মকর্তা জানে আলমসহ অন্য আসামিরা লিখিতভাবে আদালতের কাছে দাবি করেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অপরাধলব্ধ আয়ের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়।

গত বছরের নভেম্বরে দেশের পাঁচটি ব্যাংকের (সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তা জানে আলমসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আসামিদের কাছ থেকে ব্যাংকের ‘অফিসার ক্যাশ’ পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জব্দ করে পুলিশ। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে আসামিরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন বলে জানিয়েছে ডিবি।